দিনেরখবর ডেস্ক: শ্রমিকদের মামলার ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটাতে বাধ্য করতে প্রকল্পের গাড়িতে আগুন দিয়েছিলো পুলিশ। শুধু তা নয় আগুন নেভাতে আসা দেশি শ্রমিকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপ ও চায়না সেফকো কোম্পানির কয়লা বিদুৎ প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকরা।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে এসএস পাওয়ারের তত্ত্বাবধানে থাকা এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা আদিল বিল্লাহ বলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপ ও চায়না সেফকো কোম্পানির প্রায় সাড়ে ৮শ চায়নিজ শ্রমিকদের রক্ষা করতেই এস এস পাওয়ারে কর্মরত দেশি শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছিলো পুলিশ ।
এ ব্যাপারে বিদুৎ প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক শুভ অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ নিজেই গাড়িতে আগুন দিয়ে সে দায় আমাদের উপর দিয়েছে। অথচ আমরা দৌঁড়ে এসেছি গাড়ির আগুন নেভাতে।
তবে আদিল বিল্লাহ কথার সত্যতা যাচাইয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, শ্রমিকদের এই আন্দোলনের কারণে বিদেশি কোনো কর্মচারী ও কর্মকর্তার আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায় নি।
গতকাল ১৭ জানুয়ারি, শনিবার সকালে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে মাসিক বেতন, ইফতারের এক ঘণ্টা আগে ছুটি, কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই না করাসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়েকশ শ্রমিক। এসময় পুলিশ বিদেশি শ্রমিকদের ওপর হামলা হতে পারে শুধু এমন আশঙ্কায় এলোপাতাড়ি গুলি চালায় শ্রমিকদের উপর।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আন্দোলনরত শ্রমিকদের ঠেকাতে শনিবার সকাল ৭টার দিকে বিদ্যুৎ প্রকল্প এরিয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ নিজেই গাড়িতে আগুন দেয় এবং আগুন লাগানোর সে দায়ভার দেওয়া হয় শ্রমিকদের উপর। গাড়িতে আগুন দেখে শ্রমিকরা সে আগুন নেভাতে আসলে পুলিশের সাথে তকার্তর্কিতে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় পুলিশ দিনমুজুরদের উপর নির্বিচারে গুলি চালালে আহমদ রেজা, রনি হোসেন, শুভ, মো. রাহাত নামে ৪ শ্রমিক ঘটনাস্থলে মারা যান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান রায়হান নামে আরও এক শ্রমিক। একই ঘটনায় আহত হয় আরও ২৫ শ্রমিক। এছাড়া ইয়াসির, আঃ কবির, আসাদুজ্জামান নামে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন প্রদানের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলো এস আলম কয়লা বিদুৎ কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকরা। সবশেষ সে আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় ইফতারের এক ঘণ্টা আগে ছুটি দেওয়ার বিষয়টিও।
এদিকে পরিস্থিতি এখন নিযন্ত্রণে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিদেশি শ্রমিক ও পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছিল। প্রতি রক্ষার স্বার্থে বাধ্য হয়ে পুলিশ গুলি চালিয়েছিলো।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপ ও চায়না সেফকো কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে এর আগেও পুলিশের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি নির্মাণের পক্ষ বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে ৬জন নিহত হয়েছিল। একই ভাবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছিল একজন।
এন-কে