‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’- বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে নিয়ে এমন মন্তব্যের জের ধরে দুঃখ প্রকাশ করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। দলটির পক্ষ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মানহানির দাবি ও সিইসিকে দুঃখ প্রকাশ করতে আইনি নোটিশ পাঠানোর পরে সিইসি দুঃখপ্রকাশ করলেন। অবশ্য সিইসি দাবি করেছেন, গণমাধ্যমে তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৬ জুন) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিইসির দুঃখ প্রকাশের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এর আগে ‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন’—এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা, পদত্যাগ ও ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর গত ২২ জুন আইনি নোটিশ পাঠান চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। এ জন্য সিইসিকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তা না হলে দেশের প্রচলিত আইনে উপযুক্ত আদালতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় নোটিশে।
ফয়জুল করিমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল বাসেত রেজিস্ট্রি ডাকে ওই আইনি নোটিশ পাঠান।
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওমর হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে এটা বলা যাবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেছিলেন, উনি কি ইন্তেকাল করেছেন। তার এই বক্তব্যের পর নানা মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েন কমিশন প্রধান।
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন সাধারণ নির্বাচন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আনুমানিক বিকাল ৫টার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা ও তাকে রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের বর্ণিত প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চান। ওই বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তার মৃত্যু কামনা করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনের নজরে এসেছে।
প্রকৃত বিষয় হলো- বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা রদন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেন জানিয়ে ১৪ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।
ওই প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও (২) মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এই দুই ব্যক্তি ছাড়াও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও দাবি করা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এবং কোনও রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সুনাম ও সম্মানের হানি ঘটে এমন কোনও মন্তব্য করেননি।
দাবি করা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ অলীক, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্তধারণাপ্রসূত। এমন অসত্য সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার করে নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- তদুপরি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
এমজে/