ইবাদত কবুলের জন্য হালাল উপার্জন জরুরি

হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। এ জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর নবীদের হালাল রিজিক ভক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং নেক কাজ করো।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)

বৈধ পদ্ধতি উপার্জন করা কিংবা উপার্জনের চেষ্টা করা ইসলামবহির্ভূত কোনো কাজ নয়; বরং মহান আল্লাহর বিধান পালন করার পাশাপাশি তাঁর দেওয়া বিধান অনুসরণ যেকোনো হালাল পেশায় আত্মনিয়োগ করলে সেটাও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রিজিকের অন্বেষণে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে বেশি পরিমাণ স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ১০)।

এ আয়াতে মহান আল্লাহ নামাজ সম্পন্ন করার পর হালাল রিজিক তালাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

এমনকি আল্লাহর প্রেরিত নবীরা পর্যন্ত হালাল উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, প্রত্যেক নবী ছাগল চরাতেন। সাহাবিরা বলেন, আপনিও কি এমনটি করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি মক্কাবাসীর ছাগল কয়েক কিরাত (আরবের পরিমাপবিশেষ) দ্বারা চরিয়েছি।’ (আল জামে আস সহিহ, হাদিস নম্বর : ২২৬২)

এবং হালাল উপার্জনের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিজের হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম খাবার খায় না। আর নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) তাঁর নিজের হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ২০৭২)

তবে উপার্জন করতে গিয়ে এমন কোনো পেশা বা কাজে আত্মনিয়োগ করা যাবে না, যা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। নিজের শ্রম-ঘামের বিনিময়ে অর্জিত সম্পদ অবশ্যই দামি; কিন্তু অবৈধ পন্থায় উপার্জন করতে গিয়ে সেখানে নিজের রক্ত ঝরালেও তার কোনো মূল্য নেই। বরং তা মানুষকে জাহান্নামের দিকেই নিয়ে যাবে। তাই উপার্জন করতে গিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামা যাবে না। সম্পদ উপার্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা পূর্ববর্তী জাতিদেরও ধ্বংস করে দিয়েছিল। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে বাহরাইনে জিজিয়া বা কর আদায় করতে পাঠিয়েছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহরাইনবাসীদের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের জন্য আলা ইবনে আলহাজরামি (রা.)-কে শাসনকর্তা নিয়োজিত করেছিলেন। এরপর আবু উবাইদা (রা.) বাহরাইন থেকে ধন-সম্পদ নিয়ে এলে আনসার সাহাবারা তাঁর আগমনের সংবাদ শোনে, তারপর তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাত আদায়ের পর মুখ ফিরিয়ে বসেন। তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের দেখে মুচকি হেসে বলেন, আমার মনে হচ্ছে আবু উবাইদা (রা.) বাহরাইন থেকে কিছু নিয়ে এসেছে, এ সংবাদ তোমরা শুনেছ? তারা বলে, জি হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি বলেন, তাহলে তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, যা তোমাদের খুশি করবে বলে আশা রাখো। আল্লাহর শপথ! তোমাদের ওপর দারিদ্র্য ও অভাব-অনটনের আশঙ্কা আমি করি না। আমি তোমাদের ব্যাপারে এই আশঙ্কা করি যে তোমাদের ওপর প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্য ঢেলে দেওয়া হবে, যেভাবে পূর্ববর্তীদের ওপরও প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্য ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তোমরা তেমনি প্রতিযোগিতা করবে, যেমন তারা প্রতিযোগিতা করেছে। পরিশেষে তোমাদেরও ধ্বংস করে দেবে, যেভাবে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩১৫)

তাই উপার্জন করার জন্য কোথাও শ্রম দেওয়ার আগে তা অপাত্রে হয়ে যাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। উপার্জনের জন্য ইসলাম সমর্থন করে না—এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img