ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৯০ স্থানে বসছে সিসিটিভি ক্যামেরা

চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের সিটি গেইট থেকে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও অপরাধ প্রতিরোধ করতে বসছে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা।

নিরাপদ করিডোর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহাসড়কের ২৬৫ কিলোমিটারের ৪৯০টি স্থানে বসানো হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১ হাজার ৪৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা।

ইতিমধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা বসাতে খুঁটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের অধীনে ২০২১ সালের ২৩ জুন মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপ। মহাসড়কে ক্যামেরা বসাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ডেটা প্রবাহের জন্য বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিটি গেইট থেকে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ দুইটি রেঞ্জে বিভক্ত। সিটি গেইট থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত কুমিল্লা রেঞ্জ। দাউদকান্দি থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত গাজীপুর রেঞ্জ। মহাসড়কে লাগানো ৪৯০টি পোল (ক্যামেরা লাগানোর খুঁটি) ৫টি মনিটরিং সেন্টার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। একটি সেন্টারে ডেটা রেকর্ড হবে। ৪৭৪টি খুঁটি গাড়ি ও চালক শনাক্ত করবে, ১৬টি চেকপয়েন্ট খুঁটি থাকবে, যেগুলো বেপরোয়া গতি শনাক্ত করবে। ক্যামেরা থেকে ডেটা রেকর্ডের জন্য মেঘনাঘাট এলাকায় একটি দ্বিতল ডেটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। একতলায় একটি ডেটা সেন্টার এবং অন্য তলায় একটি মনিটরিং সেন্টার থাকবে। এ ছাড়া গাজীপুর রেঞ্জে একটি মনিটরিং সেন্টার ও কুমিল্লা রেঞ্জে চারটি মনিটরিং সেন্টার হবে। কুমিল্লা রেঞ্জের দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা, মেঘনাঘাট, কুমিল্লা রেঞ্জ কার্যালয় ও বারআউলিয়া হাইওয়ে থানায় একটি করে মনিটরিং সেন্টার হবে।

কুমিল্লা হাইওয়ে অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে প্রথম ও পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামের সিটি গেইট থেকে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত ৪৯০টি স্থানে ১ হাজার ৪৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। মহাসড়ক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার পাশাপাশি সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চিহ্নিত করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে থাকবে।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলসহ মহাসড়ক সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। প্রথম দিকে দক্ষ জনবল তৈরিতে বাছাই করা কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর তারা দেশে ফিরে অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলমান থাকায় বিদ্যুতের খুঁটি নির্মাণে একটু দেরি হয়েছে। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। আশা করি জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

হাইওয়ে পুলিশ,পরিবহন ও সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়কে সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা। এতে একদিকে যেমন সড়কে দুর্ঘটনা কমবে, তেমনি বাড়বে যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা। সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হলো ট্রাফিক আইন-কানুন সম্পর্কে সড়ক ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা এবং আইন না মানার প্রবণতা। সড়ক ব্যবহারকারীরা এতে শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসবে।

সিসিটিভি ক্যামেরা সফলভাবে স্থাপন করতে সক্ষম হলে তা সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মহাসড়ক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার পাশাপাশি সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চিহ্নিতকরণ, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ সহজ হবে।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img