দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে মে মাসে নয় কোটি ৮২ লাখ টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হয়েছে। ওই মাসে ২৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৪ কোটি ২১ লাখ টাকা আহরণ হয়েছে। চালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি কমের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে বন্দরের রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বাড়তি ৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় হিলি স্থলবন্দর থেকে। যে কারণে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে ৪৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সে হিসাব অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে হিলি স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে ৪৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে ৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হলেও আহরণ হয়েছে ৩৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অক্টোবরে ৩৯ কোটি দুই লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। নভেম্বরে ৪০ কোটি ৩২ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে ৩০ কোটি ২৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জানুয়ারি মাসে ৩৪ কোটি ১২ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার ধরা হলেও আহরণ হয়েছে ৩৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
মার্চ মাসে ৪২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এপ্রিল মাসে ৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মে মাসে ২৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে বন্দর থেকে ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে।
একই সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ৩৭০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেশি আহরণ হয়েছে; যা ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে ওভারলোডিং বন্ধ থাকায় বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে। বিশেষ করে বন্দর দিয়ে ১০০ ট্রাকের ওপরে পাথর আমদানি হতো। এখন সেখানে ৭০-৮০ ট্রাক আমদানি হয়। ফলে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে ডলার রেট ৮৯ টাকা ২৫ পয়সা ছিল সেটি বেড়ে ৯২-৯৩ টাকায় উঠে গেছে। কম ডলার মূল্যে এলসি খুললেও বিল পরিশোধের সময় ডলারের বাড়তি মূল্যে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক আমদানিকারক পণ্য এলসি খুলছেন না। ফলে পণ্য আমদানি কমে গেছে। এছাড়া খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকে এলসির মার্জিনের প্রভাব বেশি পড়েছে। এসব সমস্যা কেটে উঠলে বন্দর দিয়ে পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়লে রাজস্ব আহরণ বাড়বে।’
বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ড এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিল হোসেন বলেন, ‘বন্দরের কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে আমদানি-রফতানি বাড়বে। বিশেষ করে যেহেতু এখন বর্ষাকাল তাই বন্দরের ভেতরে ছাউনিযুক্ত শেডের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে ভারী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে সেগুলো বন্দরের ভেতরে ওঠা-নামানোর জন্য ইকুইপমেন্ট বাড়াতে হবে। ক্রেনসহ যেসব ইকুইপমেন্ট নেই সেগুলো বাড়াতে হবে। তাহলে ওই ধরনের পণ্যগুলোর আমদানি বাড়লে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়বে।’
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। এর কারণ গত অর্থবছরে সরকার রেয়াতি হারে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি হয়েছিল। এতে বাড়তি রাজস্ব আহরণ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে চাল আমদানিতে শুল্কহার বাড়ায় বন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করছি, অর্থবছরের শেষ মাসগুলোতে বন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পায়। সেই ধারা যদি জুন মাসে অব্যাহত থাকে, তাহলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। সেইসঙ্গে সরকার যদি রেয়াতি হারে চাল আমদানির সুযোগ দেয় তাহলে আমদানি ও রাজস্ব আহরণ বাড়বে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।’
ইউআর/