স্লুইসগেটের রেগুলেটর ও বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবেছে নবীগঞ্জ

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা-কালনী-বিবিয়ানা নদীর পানি বেড়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে স্লুইসগেটের রেগুলেটর ও বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে শতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

হবিগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন, নবীগঞ্জের বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের হলিমপুর বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্লুইচ গেটের রেগুলেটর ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। এতে ভাকৈর (পূর্ব) ও করগাঁও ইউনিয়নে পানি বাড়ছে। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুশিয়ারা, কালনী, খোয়াই ও বিবিয়ানা নদী পানির রবিবার ভোর পর্যন্ত বাড়ছিল। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ, আউশকান্দি ইউনিয়নের বন্যার পানি বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে পানি বাড়েনি বলে জানান তিনি।

পাউবো সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ উপজেলায় দীঘলবাক ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। বন্যার পানিতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যসমতপশ্চিম, নয়াপাড়া মধ্যসমত, মধ্যসমতপুর্ব, ইছবপুর, মুনসুরপুর, ইনাতগঞ্জবাজার, উমরপুর, বাউরকাপন, চন্ডিপুর, রাজনগর, রমজানপু, দিঘীরপাড়,বানিউন, দরবেশপুর , মোকামপাড়া, লতিবপুর , তপতিবাগ, মোস্তফাপুর, নোয়াহাটি, দক্ষিনগ্রাম, লালাপুর, প্রজাতপুর, কৈখাই, বক্তারপুর, নাদামপুর, কাকুড়া, মল্লিকপুর বুরহানপুর, শাহবাজপুর, শ্যামলী আদর্শ, দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা, কসবা বাজার, রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, দুর্গাপুর, মথুরাপুর,হোসেনপুর, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর,পারকুল, উমরপুর, দীঘর ব্রাহ্মণগ্রাম, করগাঁও ইউনিয়নের শেরপুর, পাঞ্জারাই, গুমগুমিয়া, সর্দারপুর, বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর , চরগাঁওসহ হলিমপুর, সোনাপুরসহ ৯টি ওয়ার্ডের ১১টি গ্রাম এবং বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের শৈলা, রামপুর, কামড়া খাই, হরিনগর,বাগাউড়া,কাজিরগাঁও, ছোট ভাকৈর, বড় ভাকৈর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

দ্রুত পানি বাড়ায় ভাকৈর (পশ্চিম), বড় ভাকৈর (পূর্ব) ও করগাঁও ইউনিয়নে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ। দিশেহারা অসহায় মানুষজন গবাদিপশু ও শিশু সন্তান নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বানভাসি মানুষদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব কেন্দ্রে পাঁচশ’র বেশি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল বলছেন স্থানীয়রা।

ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোমান হোসেন বলেন, বন্যার পানি ইনাতগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া বলেন, আল্লাহ ছাড়া আমাদের বাঁচাবার আর কেউ নাই। পুরো ইউনিয়ন পানির নিচে, চারিদিকে মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। প্রতিটি গ্রামে কোমর সমান পানি।

বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিতোষ দাশ বলেন, স্লুইচ গেটের রেগুলেটর ও বাঁধ ভেঙে পানি দ্রুতগতিতে প্রবেশ করছে। সময় যত যাচ্ছে পানি বাড়ছে। ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছি আমরা। ৯টি ওয়ার্ডের ১১টি গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। পুরো ইউনিয়ন পনিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আক্তার মিয়া ছোবা বলেন, ৯টি ওয়ার্ডের ৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত, পুরো ইউনিয়নবাসী পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহি উদ্দিন জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব গ্রামের মানুষ। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img