আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বাংলাদেশের চেতনার বেদীমূলে হামলা এবং সরকারের ওপরও হামলা। এটি করে তারা সরকারের ওপর দোষ চাপাতে চেয়েছিল। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো সরকারের সাথে হিন্দু সম্প্রদায় এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সম্পর্ক নষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা এই হামলাগুলো করেছে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যদান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।
ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো: দেলদার হোসেনের সভাপতিত্বে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল মালেক এবং নওগাঁ জেলার সংসদ সদস্যবৃন্দ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে বিএনপি-জামাত। ভোটের সময় ভারত বিরোধী শ্লোগান কারা দেয়, এই বিএনপি দেয়। হিন্দু সম্প্রদায়কে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া বারণ কারা করে, এই বিএনপি-জামাতই করে। কোরআন শরিফ যে একজন মুসলমান যুবক রেখে এসেছিল, সেটিতো তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। সে ধরা পড়লে বোঝা যাবে কার ইন্ধনে সে এটি করেছে। সবকিছু যখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট হবে তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের মুখটা চুপসে যাবে।’
‘সরকার দেশকে বিরোধীদলশূণ্য করতে চায়’ মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকুক। আমরা মনে করি, শক্তিশালী বিরোধী দল গণতন্ত্রকে সংহত করে। দু:খজনক হচ্ছে আমরা চাইলেও বিএনপি শক্তিশালী হতে পারছে না। বিএনপি’র জোট থেকে অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছে, বিএনপির রাজনীতিও অনেকে ছেড়ে দিয়েছে। আপনারা জানেন যে, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।’
কুমিল্লা ও পীরগঞ্জের ঘটনার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কারণ বাংলাদেশের কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ সাম্প্রদায়িক নয়। সুতরাং যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো দুষ্কৃতিকারীরা ঘটিয়েছে এবং এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর প্রেক্ষিতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, সেটি সরকার দমন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা রাজনৈতিকভাবেও জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু যারা এই ষড়যন্ত্রটা করেছিল তারা আরো ষড়যন্ত্র করবে। কারণ তারা সময়ে সময়ে এ ধরণের নানা ঘটনা ঘটিয়েছে। পদ্মাসেতুর নির্মাণের শুরুতে গুজব রটিয়ে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে এবং অতিসম্প্রতি পূজামন্ডপে কোরআন শরিফ রেখে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করেছিল। আমরা তাদেরকে দমন করেছি। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রকারী কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্র এবং কুচক্র পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে সেটি আমি মনে করি না।’
এর আগে ধামইরহাট আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বক্তৃতায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, দেশে যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থিতি আছে, তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলার জন্য, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য, প্রতিবেশিদের সাথে আমাদের সুসম্পর্কের ওপর কালিমা লেপন করার হীন উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন জায়গায় হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের সরকার দৃঢ় হাতে সেটি দমন করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আমাদের দল অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য হীন, তারা এ ধরণের আরো গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করবে। তাই আমি নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাবো যে আপাতত এই দুস্কৃতিকারীরা নিবৃত্ত হয়েছে মনে হলেও আমাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’