স্কটল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে শঙ্কার কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের আকাশ। ওমানের বিপক্ষেও ম্যাচের একটা পর্যায় পর্যন্ত সেই মেঘ ছিল ঘন। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই চাপ জেতার পর পাপুয়া নিউগিনিকে আর পাত্তা দিল না মাহমুদউল্লাহর দল। বড় জয়ে সুপার টুয়েলভে পা রাখার ম্যাচে সাকিব আল হাসান দেখালেন অলরাউন্ড নৈপুণ্য। আগ্রাসী ইনিংস খেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়কও।
বৃহস্পতিবার ওমানের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে অনেক পিছিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রত্যাশিতভাবেই বাংলাদেশের ম্যাচ হয়েছে একপেশে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের করা ১৮১ রানের জবাবে মাত্র ৯৭ রানে গুটিয়ে গেছে পাপুয়া নিউগিনি। ৮৪ রানের বিছাল জয়ে নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের সুপার টুয়েলভ। এখন ওমান-স্কটল্যান্ড ম্যাচে যাই হোক না কেন সেরা দুইয়ে থাকছেই বাংলাদেশ।
৩৭ বলে ৪৬ রান করার পর ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিবই ম্যাচ সেরা । ২৮ বলে ৫০ করে অবদান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর। ৬ বলে ১৯ করার পর বল হাতে ২১ রানে ২ উইকেট নিয়ে অবদান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের।
বিশাল রান তাড়ায় নেমে প্রথম দুই ওভার টিকে থাকার পর তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় পিএনজি। সাইফুদ্দিনের বলে এলবিডব্লিউতে কাটা পড়েন লেগা সিকা। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে কিপার নুরুল হাসান সোহানের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন অধিনায়ক আসাদ ভালা।
পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়েই দুই উইকেট পেয়ে যান সাকিব। তার প্রথম বলেই উড়াতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে নাঈম শেখের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন চার্লস আমিনি। তিন বল পরই সাইমন আটাই ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে। ১৪ রানেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে সহযোগি সদস্য দেশটি।
খানিক বিরতি দিয়ে আবার উইকেট। সাকিবকে উড়িয়ে মারার বিলাসিতা দেখানো সেসে বাউও ক্যাচ দেন বাউন্ডারি লাইনে। হিরি হিরিও সাকিবের সাদামাটা এক বল ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন।
এর আগে শেখ মেহেদীর শিকার হয়ে বিদায় নেন নরমান ভানুয়া। ১১ রান করে চাঁদ সপার বোল্ড হন সাইফুদ্দিনের ইয়র্কারে। আটে নামা কিপলিন দরিগা একা লড়ে কিছু রান করে দলের হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন কেবল। ৩৪ বলে ৪৬ করে একপাশে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন নাঈম শেখ। কিপার কিছুটা বেশি পেছনে থাকায় এজ হওয়া বল হাতে নিতে পারেননি। কাবুয়া মরেয়ার পরের বলেই অবশ্য তার ইতি। মিড উইকেট দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনের কাছে থাকা একমাত্র ফিল্ডারের হাতে।
আগের ম্যাচে ফিফটি করা নাঈম থামেন ০ রানে। রান না থাকা লিটন দাস এদিন শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। এক-দুই করে রান বাড়াচ্ছিলেন। চাঁদ সপারের বলে স্লগ সুইপে ছক্কা মারার পর বেশ আত্মবিশ্বাসীও লাগছিল তাকে।
গ্যাপ বের করে রানার চাকা রাখেন সচল। তিনে নামা সাকিব দেখেশুনে শুরু করেন। দ্বিতীয় উইকেটে লিটন-সাকিবের জুটিতে আসে ৫০ রান। থিতু হয়ে যাওয়া লিটনের বড় রানের তখন আভাস। কিন্তু পাওয়ার প্লের পর বল করতে আসা আসাদ ভালাকে স্লগ সুইপে উড়াতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে সেসে ভাউর নিচু ক্যাচে পরিণত হন।
অফ ফর্মে থাকা মুশফিকুর রহিম এদিনও করেন হতাশ। সাইমন আটাইর বলে পুল করে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন ৮ বলে ৫ করা এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
শুরুতে সময় নিলেও সাকিব নিজেকে মেলে ধরেন সময়ের সঙ্গেই। বড় বড় ছক্কায় উড়তে শুরু করেছিলেন তিনি। তবে ফিফটি কাছে গিয়ে চার্লস আমিনির দারুণ ক্যাচে পরিণত হন। ৩৭ বলে ৩ ছক্কায় ৪৬ করেন তিনি।
পাঁচে নামা মাহমুদউল্লাহ এদিন ছিলেন শুরু থেকেই আগ্রাসী। একাদশ ওভারে নেমে আদর্শ পরিস্থিতি পেয়ে তুলেন ঝড়। আফিফ হোসেনকে এক পাশে রেখে ২৭ বলেই অধিনায়ক পৌঁছান ফিফটিতে। এরপরই অবশ্য ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন তিনি।
২৮ বলের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ ৩ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩ ছক্কা। আফিফ শুরুতে সময় নিয়ে পরে কিছু বাউন্ডারি পেয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকেননি। ১৯তম ওভারে তার বিদায় হয় ১৪ বলে ২১ করে।
শেষ ওভারে ঝড় তুলে দলের রান ১৮০ ছাড়িয়ে নেন সাইফুদ্দিন। তার ১ ছয় ২ চারে শেষ ওভার থেকে বাংলাদেশ তুলে ২০ রান।
বিশাল সেই পুঁজি প্রতিপক্ষ পাপুয়া নিউগিনির জন্য পরে হয়ে গেল পাহাড়সম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮১/৭ ( নাঈম ০, লিটন ২৯, সাকিব ৪৬, মুশফিক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৫০, আফিফ ২১, সোহান ০, সাইফুদ্দিন ১৯* , শেখ মেহেদী ২* ; মরেয়া ২/২৬ , রাভু ২/৪০, চাঁদ ০/৫৩, সেসে ০/২০ , আসাদ ২/২৬ , আমিনি ০/৯, আটাই ১/৬ )
পাপুয়া নিউগিনি: ১৯.৩ ওভারে ৯৭ (সিকা ৫, আসাদ ৬, আমিনি ১, সেসে , আটাই ০, হিরি ৮, ভানুয়া ০, ডরিগা ৪৬* , চাঁদ ১১, মরেয়া ২, রাভু ৫ ; সাইফুদ্দিন ২/২১, মোস্তাফিজ ০/৩৪, তাসকিন ২/১২ , সাকিব ৪/৯, শেখ মেহেদী ১/২০ )
ফল: বাংলাদেশ ৮৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।