দেশে নতুন মাদকের সন্ধান, ‘কুশ’ ‘এক্সট্যাসি’ ‘হেম্প’ ‘মলি

রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে ওনাইসী সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদ নামের ওই যুবককে আটক করেছে র‍্যাব। সংস্থাটি জানিয়েছে, আটক যুবকের কাছে নতুন কয়েক ধরনের মাদক পাওয়া গেছে। ‘কুশ’, ‘এক্সট্যাসি’, ‘হেম্প’, ‘মলি’ নামে বিদেশি এসব মাদক দেশে নিয়ে আসা এবং বাজারজাতকরণের সঙ্গে এই যুবক জড়িত।তার সঙ্গে ফয়সাল নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশির যোগসাজশ রয়েছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল (সোমবার) রাতে অভিযান চালিয়ে ওনাইসীকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, দশমিক শূন্য ৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেন্টানল, ১৮ গ্রাম কোকেন, ১২৩টি এক্সট্যাসি, ২৮টি এডারল ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও অর্ধলক্ষাধিক মার্কিন ডলার।

পরে তার মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাপ নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশি প্রজাতির কুশ উৎপাদনের প্ল্যান্ট ও সেটআপ উদ্ধার করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে এ কার্যক্রম শুরু করেন ওনাইসী।তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। এ ছাড়া অর্থপাচারের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটি তদন্ত করে দেখবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

ওনাইসীকে আটকের পর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার মঈন জানান, ‘কুশ’ মারিজুয়ানা বা গাঁজার মতো এক ধরনের উদ্ভিদ। আটক ওনাইসী ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাপ নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে এই মাদকের চাষাবাদ করছেন। তিনি ‘কুশ’ উৎপাদনের পর সেটি বাজারজাতও করেছেন। তার মোহাম্মদপুরের বাসায় র‍্যাব অভিযান চালিয়েছে। শুধু ‘কুশ’ নয়, ‘এক্সট্যাসি’, ‘হেম্প’, ‘মলি’, ‘এডারল’, ‘ফেন্টানিল’- এর মতো বিভিন্ন ধরনের মাদক বিদেশ থেকে দেশে এনে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও করছেন ওনাইসী।

তবে এসব মাদকের প্রভাব সম্পর্কে কিছু বলেননি র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

র‌্যাব জানায়, ওনাইসী বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে এসব মাদক সরবরাহ করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছিলেন তিনি। এসব মাদক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসছেন এই যুবক।

মঈন জানান, চার বছর ধরে ওনাইসী একটি ‘ক্লোজ’ গ্রুপের মাধ্যমে এসব মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।তার অন্যতম সহযোগী কানাডাপ্রবাসী ফয়সাল নামের এক যুবক।

মঈন জানান, চার বছর ধরে ওনাইসী একটি ‘ক্লোজ’ গ্রুপের মাধ্যমে এসব মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।তার অন্যতম সহযোগী কানাডাপ্রবাসী ফয়সাল নামের এক যুবক।

ওনাইসী সম্পর্কে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ওনাইসী বাংলাদেশে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে তিনি বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে ২০১৪ সালে দেশে ফেরেন। প্রথম দিকে ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি থাইল্যান্ডে অবস্থান করার সময় সেখান থেকে ওনাইসীকে বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত মাদক সরবরাহ করতেন। পরে ওই ব্যক্তি কানাডায় যাওয়ার পর সেখান থেকে এখন মাদক সরবরাহ করছেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওনাইসীর নিকটাত্মীয়দের ঠিকানায় মাদকের পার্সেল আসত। তবে তার আত্মীয়রা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

কমান্ডার মঈন বলেন, আটকের পর ওনাইসী জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি মাদকের অর্থ পরিশোধ করতেন হুন্ডির মাধ্যমে।

তার বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানায় র‌্যাব।

কমান্ডার মঈন বলেন, ওনাইসীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে- কুশ উৎপাদন করে উন্নত দেশে বাজারজাত করবেন। এ কারণেই পরীক্ষামূলকভাবে তিনি মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট এক লাখ টাকায় ভাড়া নিয়ে কুশ প্ল্যান্ট তৈরি করেছেন। ওই প্ল্যান্টে তিনি প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৩০০ গ্রাম কুশ উৎপাদন করেছেন। এসব কুশ প্রতি ১০০ গ্রাম তিনি ৩ লাখ টাকায় বিক্রিও করেছেন। মাদক সরবরাহে ৬-৭ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন ওনাইসী। এই সদস্যরা ওনাইসীর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img