টিকিটযুদ্ধ শেষে শূন্যহাতে ফিরবে লক্ষাধিক যাত্রী

ঈদে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শেষ হচ্ছে আজ। গত চার দিন কমলাপুরসহ বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে মানুষ যুদ্ধ করেছেন। তীব্র গরমে রাতদিন এক করে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করেছেন।

সরাসরি এবং অনলাইন দুই মাধ্যমেই প্রয়োজনের চেয়ে টিকিটের সংখ্যা অপ্রতুল। ফলে সময়ের সঙ্গে দুই লাইনে শুধু ভিড় বেড়েছে। এতে দুর্ভোগ ছাড়া তেমন সফল মেলেনি। দিনে কাউন্টার থেকে মাত্র ১৩ হাজার ৩৩৬ টিকিট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়ান। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় গত কয়েক দিনে অনেক মানুষ শূন্য হাতে ফিরে গেছেন। আজ শেষ দিনও ফিরবেন অনেকে। সব মিলে এদের সংখ্যা দাঁড়াবে লক্ষাধিক বলে মনে করেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবারও হাজার হাজার লোক টিকিট কাটতে পারেননি। পৌঁছাতে পারেননি কাউন্টার পর্যন্ত। আর অনলাইনে প্রতিদিনের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও অ্যাপসে ঢুকতে পারেননি টিকিট প্রত্যাশীরা। এত কিছুর পরও টিকিট বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত সহজ ডটকমের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমিত সংখ্যক টিকিট, অধিকাংশ লোক পাবে না এটাই স্বাভাবিক।

আর যাত্রীদের মন্তব্য রেলের টিকিট নিয়ে দুর্ভোগ শেষ হবে না কোনো দিনই। তাদের মতে, প্রায় দেড় যুগ আগে অনলাইনে এবং কাউন্টারে অত্যাধুনিক ডিজিটাল সেবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবে সেই সেবার শুরু থেকেই যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ভোগ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অদক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করায় সমস্যা চরমে উঠেছে। আজ শেষ দিনের টিকিট বিক্রি হবে। এ দিনও ভোগান্তি হবে টিকিট প্রত্যাশীদের। যারা পাবেন তারা খুশি মনে স্টেশন ছাড়বেন। যারা পাবেন না তারা হতাশ হবেন। এ অবস্থায় আজ থেকে আগাম টিকিটের ট্রেন যাত্রা শুরু হচ্ছে।

রেলের হিসাব অনুযায়ী রাজধানী থেকে এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন মাত্র ২৬ হাজার ৬৭২টি টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর অর্ধেক ১৩ হাজার ৩৩৬টি টিকিট কমলাপুরসহ রাজধানীর আরও চারটি স্টেশনে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ একটি স্টেশনে মাত্র দুই হাজার ৬৬৭টি টিকিটের বিপরীতে হাজার হাজার লোক লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের সাফ বক্তব্য, অনলাইনে ছাড়া টিকিট কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। আর কাউন্টারে শেষ হয় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই।

কমলাপুরসহ রাজধানীর আরও চারটি স্টেশন এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ সারা দেশে মোট ৭৭টি স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। কোনো কোনে স্টেশনে দুই থেকে তিনটি অগ্রিম টিকিট বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে টিকিট বিক্রির একটি তালিকা যুগান্তরের হাতে এসেছে। সে অনুযায়ী ৩৯টি আন্তঃনগর ট্রেনে মোট ২৭ হাজার ৮৫৩টি (স্পেশাল দুটি ট্রেনসহ) টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে ১৩ হাজার ৩৩৬টি বাকিগুলো অনলাইনে।

৩৯টি ট্রেনের ৩০৬টি এসি বার্থ, ৯২৪টি এসি সিট, ৪৬৯৭টি এসি চেয়ার, ৪০টি ১ম বার্থ, ২৯৪টি প্রথম সিট, ২৫০টি প্রথম চেয়ার, ১৭ হাজার ৭৪২টি শোভন চেয়ার ও তিন হাজার ৫৬০টি শোভন টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের মোট ৩২ হাজার ১১৩টি টিকিট আছে। এগুলো অগ্রিম নয় যাত্রার তারিখে কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে, আগাম বার্থ, এসি সিট, এসি চেয়ারের টিকিট যুদ্ধে লড়া সাধারণ মানুষ খুব বেশি পায় না। এসবের অধিকাংশই ভিআইপিদের নাম ব্যবহার করে রেখে দেওয়া হয় যা অদৃশ্য থেকে যাচ্ছে, বছরের পর বছর।

এদিকে মঙ্গলবার কমলাপুর কাউন্টারে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে দুর্ভোগ আরও চরমে ওঠে। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরুর ১০ মিনিট পরই স্টেশনে বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রায় ২৮ মিনিট পর বিদ্যুৎ আসে। গত তিন দিনের চেয়ে মঙ্গলবার মানুষের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। কমলাপুর, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও ও ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে আসন সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী লাইনে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে টিকিট কাটতে আসা নারীদের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। কোনো কোনো নারী ২০ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি। কমলাপুর স্টেশনে ২৩টি কাউন্টারের মধ্যে দুটি থেকে নারীদের টিকিট দেওয়া হয়। নারীরা বলেন, ছেলেদের চেয়ে নারীদের লাইন ছিল লম্বা। নারীদের জন্য কাউন্টার সংখ্যা বাড়ালে দুর্ভোগ কম হতো।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার যুগান্তরকে জানান, টিকিট না পাওয়া ক্ষিপ্ত লোকজনের কষ্ট আমরা বুঝি। কিন্তু, আমরা নিরুপায়। নির্ধারিত আসনসংখ্যার বিপরীতে টিকিট বিক্রি করছি। এর বিপরীতে বহুগুণ বেশি লোক লাইনে দাঁড়াচ্ছে। একই অবস্থা অনলাইনে, সেখানেও সীমিত টিকিট। ফলে মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভিআইপি নামে কোনো টিকিটই দেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকিট পাচ্ছেন না, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এমন অভিযোগ করছেন।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img