আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতনের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বন্দুকধারী তালেবান যোদ্ধারা ঢুকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। এমন একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
দুদশকের লড়াই শেষে গত রোববার (১৫ আগস্ট) সকালের দিকে আফগানিস্তান পুরোপুরি তালেবানে নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের শেয়ার করা ছবিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বিমানে ওঠার কয়েক ঘণ্টা পর পরিত্যক্ত প্রাসাদে একটি ডেস্ক ঘিরে জড়ো হতে দেখা যায় তালেবান যোদ্ধাদের।
মিডল ইস্ট আইয়ের তুর্কি ব্যুরো প্রধান রাগিব সইলো আলজাজিরা থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। যাতে দেখা যায়, প্রাসাদের ভিতরে তালেবান যোদ্ধারা কোরআন তেলাওয়াত করছেন।
কাবুলের একটি সূত্রের বরাতে ডেইলি বিস্ট জানিয়েছে, তালেবান যোদ্ধারা কোরআনের সুরা নসর পড়ছিলেন। যা অর্থ হচ্ছে, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।’
এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানদের ঢল অব্যাহত রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনারা। দেশত্যাগ ঠেকাতে বোমা হামলাসহ নির্যাতন চালাচ্ছে তালেবান।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। অন্যদিকে শরণার্থী ঢল ঠেকাতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে তুরস্ক ও গ্রিস। এদিকে প্রাণহানির ঝুঁকি ছাড়া সবাইকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য কাবুল বিমানবন্দরের। প্রাণের সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন মার্কিন সেনাদের হাতে। প্রিয় সন্তানের জীবন বাঁচাতে মায়ের এই চেষ্টা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার কাঁটাতারের বেড়াজালও বাধা মনে হয়নি।
তালেবান আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণের পর থেকেই উঁচু দেয়াল, কাঁটাতারের বেড়া, তালেবানের বাধা কিংবা উড়ন্ত বিমানের চাকা কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে দেশত্যাগে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন আফগানরা।
তালেবানের আফগানিস্তান দখলের পর থেকে প্রাণ নিয়ে পালানোটাই যেন এখন একমাত্র লক্ষ্য। কাবুল বিমানবন্দরে এক নারীকে এভাবেই প্রাচীর টপকাতে সাহায্য করেন মার্কিন সেনারা। তবে দেশ ছাড়তে আগ্রহী আফগানদের ওপর মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাদের সামনেই তালেবান সদস্যদের চড়াও হতে দেখা যায়।
কোথাও কোথাও বোমা হামলাও চালিয়েছে তালেবান। সাধারণ আফগানদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সেনা ও কূটনীতিকদেরও কাবুল ত্যাগ অব্যাহত আছে।
এক আফগান নাগরিক বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি এ জন্য যে, শেষ পর্যন্ত আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে পারছি। এখানকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
বাড়ি বাড়ি তল্লাশির পাশাপাশি মার্কিন সেনাদের সহায়তাকারী দোভাষী ও দেশটির সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর নিপীড়ন শুরু করেছে তালেবান। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারীরা। এরইমধ্যে দেশটির পপ তারকা আরিয়ানা সাঈদসহ অনেক শিল্পী আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। তবে যারা রয়ে গেছেন কতদিন নিরাপদ থাকবেন তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা।
আফগানিস্তান দখলের পর এবার সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে তালেবান। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তালেবানের আইনি, ধর্মীয় ও বিদেশ বিষয়ক নীতিনির্ধারকরা সরকারের চূড়ান্ত রূপরেখা নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বললেও নতুন সরকার আগের তুলনায় আরো উদার হবে বলে দাবি করছে তালেবান।
এদিকে কাবুল বিমান বন্দরে বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিমানে করে মার্কিন সেনা ও আফগানদের সরিয়ে নেয়া ইতিহাসের দীর্ঘতম ও সবচেয়ে কঠিন অভিযান বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। একইসঙ্গে প্রাণহানি ছাড়া সবাইকে নিরাপদে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন বাইডেন।
এদিকে আফগানিস্তানের সংকটময় এই সময়ে সাধারণ আফগানদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমানা খুলে দিতে জাতিসংঘের আহ্বান উপেক্ষা করে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ শুরু করেছে তুরস্ক ও গ্রিস।