রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪১ জনকে ‘অবৈধ’ নিয়োগদানের পর দিনই তড়িঘড়ি করে কমিটি গঠন এবং তদন্ত শেষ করে নিয়োগ বাতিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও এই রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। এতে ক্ষুব্ধ তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে বা দেরি হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে অবৈধ নিয়োগ দেওয়া ও সরকারের নির্দেশনা না মানার সুযোগ নেবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে আমলে না নিয়ে আবদুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে অ্যাডহকে নিয়োগ দেন। সেদিন এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে ঐদিনই বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তদন্ত কমিটি বিদায়ি উপাচার্যসহ বেশ কয়েক জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। আবদুস সোবহানের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে। তবে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সুপারিশের আলোকে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও আগেই মন্ত্রণালয় এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল।
শিক্ষাসচিব মাহবুব হোসেন গতকাল বিকালে বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা মন্ত্রী মহোদয় জানাবেন।’ এর বাইরে কোনো তথ্য দিতে পারেননি এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আছেন তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়োগপ্রাপ্তদের পক্ষে থাকার জন্য বলার অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগও করেছে বলে জানা গেছে। আর এ কারণে তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা এসব নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ কারণে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমিভাব দেখাচ্ছে। আর এতে সুযোগ নিচ্ছেন অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা। তারা (নিয়োগপ্রাপ্তদের) যোগদানে বাধ্য করতে কর্তৃপক্ষকে নানামুখী চাপ দিচ্ছেন। নেমেছেন আন্দোলনে। আন্দোলনকারীদের বাধায় স্থগিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স কমিটির সভা, এমনকি সিন্ডিকেট সভাও। মধ্যে বিরতি দিয়ে সোমবার থেকে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা সাংবাদিকদের জানান, সোমবার আন্দোলনকারীরা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা ফাইন্যান্স কমিটির সভা ও সিন্ডিকেট সভা করতে পারব, তারা কোনো বাধা দেবে না। কিন্তু সভা ডাকা হলেও তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তাদের বাধার মুখে সভাটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি। সভায় তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো এজেন্ডাও ছিল না বলে জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, মন্ত্রণালয় এই নিয়োগকে অবৈধ বলেছে। তবে এই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করবে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট/কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়েরও ভূমিকা আছে। এছাড়া আরো বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু রিপোর্ট দেওয়ার এক মাস পরও এই রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখছি না। যদি এই সুপারিশ বাস্তবায়ন না হয় তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিয়মে উত্সাহ দেবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
প্রসঙ্গত, তদন্ত প্রতিবেদনে বিতর্কিত এসব নিয়োগে বিদায়ি ভিসি প্রফেসর সোবহান, একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও দুই জন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ভিসির জামাতাকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। কমিটি ড. সোবহানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে।
এন-কে