জিরো কার্বন অর্থনীতি বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে বহুজাতিক ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এই খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক জলবায়ু, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণাকারী সেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্টাল এওয়ারনেস এন্ড রিসার্চ নেটওয়ার্ক (EARN) ।

আজ ২৪ জুন, বৃহস্পতিবার নগরীর জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

এসময় মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ মিসবাহুজ্জামান বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পৃথিবীকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ুর যে অভিঘাত, সেটি মোকাবেলা করতে গিয়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সেখানে আমাদের কিছু অঙ্গীকার রয়েছে। যে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। একটা টার্গেট নিয়ে আমাদের দক্ষতা দিয়ে সেসব মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে কার্বন নিসরন করেছি তা পরিবেশের জন্য যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই আমাদের পরিবেশে শূন্য কার্বন নিয়ে আসতে হবে। যেটাকে আমরা বলছি জিরো কার্বন অর্থনীতি। এই জিরো কার্বন অর্থনীতি বাস্তবায়নে আমাদের কিছু টার্গেট করে পরিকল্পনা করতে হবে। তার জন্য শুধু সরকার একা কাজ করলে হবে না। এর সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করতে হবে, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলে জিরো কার্বন নিঃসরণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার রাষ্ট্রসমূহের সার্বজনিন কর্মকাঠামো (ইউএনএফসিসিসি) ১৯৯২ সালে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে রাখার যে প্রত্যয় নিয়েছিলো তিন দশক পর এসেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। ইউএনএফসিসিসিতে শিল্পোন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ তথা জলবায়ু পরিবর্তরেন নিজেদের দায়ভার স্বীকার করে নিলেও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় ধরে তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সর্বশেষ জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নির্গমন হ্রাসের বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে গৃহীত তিনটি কৌশলের একটি হলো পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে উন্নত দেশসমূহকে ২০৩০ সালের মধ্যে, অগ্রসরমান উন্নয়নশীল দেশসমূহকে ২০৪০ সালের মধ্যে ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে ২০৫০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে হবে।

কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন, এতে বিনিয়োগ এবং ব্যবহার কমেনি। উন্নত ও অগ্রসরমান উন্নয়নশীল দেশসমূহ নিজেদের দেশে কয়লার ব্যবহার কমালেও কয়লার উৎপাদন চালু রেখেছে। পাশাপাশি অনুন্নত দেশসমূহে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। আমরা কয়লাসহ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন, এগুলোতে বিনিয়োগ এবং এদের ব্যবহার বন্ধে সুস্পষ্ট ও দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতকরণের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বনশূন্য পৃথিবী গড়ার প্রতিশ্রম্নতির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

প্রার্থী ঘোষের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক জলবায়ু ,পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণাকারী সেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্টাল এওয়ারনেস এন্ড রিসার্চ নেটওয়ার্ক (EARN) এর সকল সদস্য।

এন-কে

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img