যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে পরীক্ষার পর স্থানীয় ৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কারোরই ভারতে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক বা ইতিহাস নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদের মধ্যে সাত জন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের সবার বয়স ৫৬ বছরের নিচে।
সোমবার (৩১ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে যবিপ্রবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে সোমবার সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে একদল গবেষক করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত করেন। ইতোমধ্যে ভারতীয় ধরন শনাক্তের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর, যশোরের স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
জিনোম সেন্টার থেকে জানানো হয়, গত ২৯ মে চার জনের নমুনা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিন জনের নমুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং আরেকজনের নমুনা ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যবিপ্রবির ল্যাবে পাঠানো হয়। সম্প্রতি ভারত ফেরত কোয়ারেন্টিনে থাকা পরবর্তী সময়ে পজিটিভ হওয়ার হার যশোর জেলায় গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় স্থানীয়রা সংক্রমিত হয়েছেন কিনা সেটি জানার জন্য স্থানীয় ৩৬ জনের নমুনা সিকোয়েন্সিং করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়।
গবেষক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বি১.৬১৭.২ নামের ভ্যারিয়েন্টটি জিনোম সেন্টারে শনাক্ত হয়েছে। গত ৮ মে যবিপ্রবির ল্যাবে সর্বপ্রথম দুই জনের নমুনায় ভারতীয় এ ধরন শনাক্ত হয়। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে এখন পর্যন্ত ভারত ফেরত ৫৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের করোনার পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছে। ভারত ফেরত রোগীদের মধ্যে সাত জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭.২-এর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুই জন করোনা পজিটিভ হয়েই দেশে আসেন। কেউ কেউ উপসর্গহীন অবস্থায়ও পজিটিভ হন। যবিপ্রবির ল্যাবে এ পর্যন্ত ভারত ফেরত ও স্থানীয়সহ ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
গবেষক দল জানায়, গত ২০ ডিসেম্বর এ ধরনটি সর্বপ্রথম ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত এটি বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিসহ ভারতীয় সব ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগের বলে জানিয়েছে। তাদের মতে, ভারতীয় এ ভ্যারিয়েন্ট ৫০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অধিবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনার সুপারিশ করেছে গবেষক দলটি।
গবেষক দলটি ভারত থেকে আগত সবাইকে করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনও কারণে চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও পরীক্ষা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন গবেষকরা।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে গত বছরের এপ্রিল থেকে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি করোনার ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও কাজ করছেন সেখানকার গবেষকরা। জিনোম সেন্টারে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন ড. তানভীর ইসলাম, ড. হাসান মোহাম্মদ আল-ইমরান, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এএসএম রুবাইয়াত-উল-আলম, মো. সাজিদ হাসান, আলী আহসান সেতু প্রমুখ।