গত ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর পর বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর দেশে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন, সেই বিষয়ে কোনো তথ্যই ছিলো না আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। কিন্তু দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পর হঠাৎ করেই জনসমক্ষে এলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নই উঠে তাহলে এতোদিন কোথায় ছিলেন বসুন্ধরার আনভীর!
আজ শনিবার (২৯ মে) শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের (২০২১-২৪) নির্বাচনে তাকে দেখা যায়। এ নির্বাচন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ও করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত আসামি সায়েম সোবহান আনভীর। ঘটনার পর তিনি দেশ আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন, সেই বিষয়ে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ তারা পেয়েছেন। এ ঘটনায় আনভীরের কোনো বক্তব্য কোনো গণমাধ্যমই পায়নি।
আনভীরের অবস্থান সম্পর্কে সে সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী দাবি করেন, “আনভীরের দেশত্যাগের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই।”
আসামি আনভীর কোথায় আছেন?—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, “অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসামি (আনভীর) বাংলাদেশে আছেন। তিনি দুটি (বাংলাদেশ ও স্লোভাকিয়া) পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।”
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, কার্গো বিমানে করে দেশত্যাগ করেছেন সায়েম সোবহান ও তার স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের কয়েক সদস্য। তবে সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, “কার্গো বিমানে কারও পক্ষে দেশত্যাগ করা সম্ভব নয়।”
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, চার্টার্ড ফ্লাইটের (ভাড়া করা বিমান) সদস্য ছিলেন আটজন। যাত্রী তালিকা অনুযায়ী দেশ ছেড়েছেন সায়েম সোবহান আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, তাদের দুই সন্তান, ছোট ভাই সাফওয়ান সোবহানের স্ত্রী ইয়াশা সোবহান এবং তাদের মেয়ে ও দুই পরিবারের তিনজন গৃহকর্মী ডায়ানা হার্নানডেজ চাকানান্দো, মোহাম্মদ কাদের মীর ও হোসনে আরা খাতুন। এর আগে সায়েম সোবহান আনভীরের ছোট ভাই সাফওয়ান সোবহানও দেশ ছাড়েন।
মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় গত ২৭ এপ্রিল সায়েম সোবহানের ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগাম জামিনের আবেদন করেন আনভীরের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তবে সেই জামিন শুনানি স্থগিত করেন আদালত।
অন্যদিকে আলোচিত এই মামলায় আনভীরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করে অনেকগুলো সামাজিক সংগঠন।
গত ২৬ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করে মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিরা। দুই বছর আগে মুনিরা ও আনভীরের মধ্যে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন। তাদের প্রায় সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে আনভীরকে পাওয়া যাচ্ছে না, গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়। তিনি দেশ বা বিদেশে আছেন, সে বিষয়েও কেউ সঠিকভাবে অবগত নন।
এমকে