আফগানদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে প্রথমবার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

আফগানদের স্বপ্নরথ থামিয়ে ৯ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে ও টি—টোয়েন্টি মিলিয়েই তাদের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল এটি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাদেরকে ফেভারিটের কাতারে রাখেননি খুব বেশি লোকে। অতীতের সব ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি আর হাহুতাশকে পেছনে ফেলে টানা আট জয়ে বিশ্ব আসরের ফাইনালে এইডেন মারক্রামের দল।

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৫৬ রানেই অলআউট হয় আফগানিস্তান। টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড এখন এটি। আর সেই রান তাড়ায় নেমে ৫৩ বলেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তুলে নেয় ৯ উইকেটের বিশাল জয়।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলীয় ৫ রানে ওপেনার কুইন্টন ডি কককে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ রান করে ফজল হক ফারুকির বলে বোল্ড হন তিনি। এরপর আরেক ওপেনার রিজা হেনড্রিকস অধিনায়ক আইডেন মারক্রামকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়েন। দুজনেই থাকেন অপরাজিত। ২৫ বলে ২৯ রান করেন হেনড্রিকস। ২১ বলে ২৩ রান আসে মারক্রামের ব্যাট থেকে।

এর আগে, সেমিফাইনালে টসে জিতে আগে ব্যাট নিয়েই যেন বড় ভুল করে ফেলেছিলেন আফগানিস্তান অধিনায়ক রশিদ খান। ফ্রেশ উইকেটে ১১ ওভার ৫ বলেই দলের অলআউট হয়ে যাওয়া অন্তত তাই বলে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা শুরু থেকেই ছিল ছন্নছাড়া। ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা রাহমানউল্লাহ গুরবাজ প্রথম ওভারেই বিদায় নেন শূন্য রানে। ইয়ানসেনের বলটি ছিল প্রায় হাফ ভলি, কিন্তু বলের কাছে না গিয়েই আলগা শট খেলেন টুর্নামেন্টের সফলতম ব্যাটসম্যান।

এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড তিনটি শতরানের বন্ধ গড়া উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় চার রানেই।

সেটি কেবল শুরু। দ্রুতই গুরবাজের পথ ধরেন সতীর্থরা। ইয়ানসেনের পরের ওভারেই ভেতরে ঢোকা বল জায়গা দাঁড়িয়ে খেলে বোল্ড গুলবাদিন নাইব।
তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে জোড়া আঘাত হানেন কাগিসো রাবাদা। তার প্রথম বলেই দারুণ ইন কাটারে উড়ে যায় ইব্রাহিম জাদরানের বেলস। তিন বল পর আরেকটি ইন কাটারে বাতাসে ডিগবাজি খায় মোহাম্মদ নাবির অফ স্টাম্প।

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া নানগেলিয়া খারোটেকে পরের ওভারে বিদায় করেন ইয়ানসেন। আফগানদের রান তখন ৫ ওভারে ৫ উইকেট ২৩।
উইকেট পতনের সেই ধারা চলতেই থাকে। বিপর্যয় কাটানোর মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যাটিং দেখা যায়নি আফগানদের মধ্যে। আনরিখ নরকিয়ার প্রথম ওভারেই উড়িয়ে মেরে আউট হন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।

বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাব্রেইজ শামসি প্রথম ওভারেই দারুণ বোলিংয়ে শিকার ধরেন দুটি। রাবাদাকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন রাশিদ। কিন্তু আফগান অধিনায়কের অফ স্টাম্প উপড়ে দেন নরকিয়া।

এরপর শেষ উইকেটও দ্রুতই তুলে নেন শামসি। এবারের আসরে স্রেফ চার ম্যাচ খেলেই ১১ উইকেট শিকার করলেন ৩৪ বছর বয়সী এই স্পিনার। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন তিনি দুটি ম্যাচে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় আফগানরা চেষ্টা করেছেন বল হাতে লড়াই করতে। কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড এককভাবে নিজের করে নিয়েছেন ফাজালহাক ফারুকি (১৭ উইকেট)। তবে ম্যাচের ফল নিয়ে কোনো সংশয় তখন ছিল না। হয়তো আফগানদেরও নয়।

রিজা হেনড্রিকস ও এইডেন মারক্রাম অনায়াসেই পাড়ি দেন বাকি পথ। দারুণ কিছু শট খেলে দুজন ম্যাচ শেষ করে দেন ৮.৫ ওভারে। উল্লাসে মেতে ওঠে তাদের ডাগ আউট।
অসাধারণ এক অভিযানের আফগানদের শেষটা হলো চরম হতাশায়। তবে মাথা উঁচু রাখতে পারেন রাশিদ খানরা। বিশ্বমঞ্চে আফগান ক্রিকেটের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হয়েই থাকবে এই আসর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ১১.৫ ওভারে ৫৬ (গুরবাজ ০, জাদরান ২, নাইব ৯, ওমারজাই ১০, নাবি ০, খারোটে, জানাত ৮, রাশিদ ৮, নুর ০, নাভিন ২, ফারুকি ২*; ইয়ানসেন ৩-০-১৬-৩, মহারাজ ১-০-৬-০, রাবাদা ৩-১-১৪-২, নরকিয়া ৩-০-৭-২, শামসি ১.৫-০-৬-৩)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮.৫ ওভারে ৬০/১ (ডি কক ৫, হেনড্রিকস ২৯*, মারক্রাম ২৩*; নাভিন ৩-০-১৫-০, ফারুকি ২-০-১১-১, রাশিদ ১-০-৮-০, ওমারজাই ১.৫-০-১৮-০, নাইব ১-০-৮-০)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মার্কো ইয়ানসেন।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img