অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর অবশেষে চাঁদের বুকে সফল অবতরণ করল মার্কিন নভোযান ‘অডিসিয়াস’। এটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘ইস্টার্ন’ এলাকায় অবতরণ করে।
মহাকাশযানটি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের সাহায্যে মহাকাশে যাত্রা শুরু করেছিল। অডিসিয়াসের নকশা ও চাঁদে তার যাত্রা পরিচালনা করেছিল টেক্সাসের হিউস্টনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইনটুইটিভ মেশিনস। উৎক্ষেপণের পর সপ্তাহজুড়ে এটির যাত্রা দৃশ্যত ভালোই ছিল। অডিসিয়াস চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছেছিল বুধবার।
তবে অডিসিয়াসকে চাঁদের মাটিতে নামানোর প্রস্তুতিকালে নিয়ন্ত্রণকক্ষে থাকা পরিচালনাকারীরা বুঝতে পারেন, এটির উচ্চতা ও আনুভূমিক বেগ নির্ধারণে প্রয়োজনীয় লেজার এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মসৃণভাবে অবতরণে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা পয়েন্ট কাজ করছে না। এ অবস্থায় তাঁরা চাঁদের চারপাশে নভোযানটি চলাচলের জন্য অতিরিক্ত পথ বের করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আপলোডের কাজ শুরু করেন তারা। এর মধ্য দিয়ে অডিসিয়াসকে নাসার ডপলার লাইডার ব্যবস্থায় যুক্ত করা হয়।
অডিসিয়াসের চাঁদে নামার আগমুহূর্তের কয়েক সেকেন্ড ছিল এ অভিযান পরিচালনাকারীদের জন্য অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর। ওই সময় নভোযানটি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটান তারা।
শেষ মুহূর্তের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ইনটুইটিভ মেশিনসের কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, অডিসিয়াস সফলভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে ও তাদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান শুরু করেছে। চাঁদের অডিসিয়াসের অবতরণের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ‘যোগাযোগবিষয়ক সমস্যা কাটিয়ে’ মহাকাশযানটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তারা।
অবতরণের কিছু সময় পর ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা টিম ক্রেইন অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘কোনো রকম সংশয় ছাড়া আমরা এটি নিশ্চিত করতে পারি, আমাদের নভোযান এখন চাঁদের বুকে। আমরা এটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি।’
ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তার দলকে বলেন, ‘আমি জানি, অভিযানের ওই মুহূর্ত ছিল উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার। তবে আমরা এখন চন্দ্রপৃষ্ঠে ও মহাকাশযানটির সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করছি। চাঁদে আপনাদের স্বাগত।’
বাণিজ্যিক মহাকাশযানের মাধ্যমে পরিচালিত এই চন্দ্রাভিযানে অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এর আগে গত মাসে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চন্দ্রাভিযান পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে এবারের সফল চন্দ্রাভিযান ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক মহাকাশ শিল্পের জন্য এটি এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
এর আগে নাসা ১৯৭২ সালে সফলভাবে চাঁদে অ্যাপোলো ১৭ মিশন পরিচালনা করেছিল।
এমজে/