গাজায় হামলা নিয়ে আরবদের মধ্যে বিভক্তি

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যখন সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিবৃতির ভাষা নিয়ে ইতস্তত করছে আরব দেশগুলো। এর আগের যুদ্ধগুলোতে কাকে দোষারোপ করা হবে ও লড়াই থামাতে কী করা উচিত, তা নিয়ে ঐকমত্য থাকলে এই প্রথম তাতে ফাটল দেখা দিয়েছে।

গাজায় নৃশংসতা ও আল-আকসা মসজিদে উত্তেজনা উসকে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তুরস্ক ও ইরানের মতো কিছু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। কিন্তু অন্য দেশগুলো এবার বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযম দেখিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে এমন দাবিই করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরোক্কো ও সুদান কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ইসরায়েলি সহিংসতা নিয়ে ক্রোধে সোচ্চার নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করায় তাদের ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরায়েলি বর্বরতার এই পর্যায়ে এসে পরস্পর থেকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখানোয় কিছু আঞ্চলিক শক্তিকে নিজ দেশের নাগরিকের কাছে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।

কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (সিএএবিউ) পরিচালক ক্রিস ডোয়েল বলেন, আমিরাতের এই প্রত্যাখ্যানের অবস্থান বিস্ময়কর। তারা ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে যা ঘটছে, তা নিয়ে খুব একটা সমালোচনা করেননি।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে কঠিন ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভারসাম্য রক্ষা করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের বিরুদ্ধে দেশটি যে নিন্দা জানিয়েছে, তাতে ইসরায়েলি ভাষ্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমিরাতের পক্ষ থেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে: ‘ইসরায়েলের সঙ্গে বিকশিত হতে যাওয়া জোটকে তারা ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না’। দেশটির ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্য এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ইরান, তুরস্ক ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে মোকাবিলায় এই জোট তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিস ডোয়েল আরও জানান, হামাসকে স্বীকৃতি না দিয়েই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারা সেটিও করেনি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও কুয়েতসহ কিছু আরব দেশের সামাজিক মাধ্যমে ‘ফিলিস্তিন আমার কোনো সংকট না’ বলে হ্যাশট্যাগ প্রচার চালানো হয়েছে। যাতে সরকারেরও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু তাতেও ইসরায়েলি নেতৃত্ব ও সহিংসতার বিরুদ্ধে নিন্দা ও ফিলিস্তিনের পক্ষে আঞ্চলিক জনসমর্থন কমে যায়নি।

কার্নেজি মিডল ইস্ট সেন্টারের গবেষক হাজি আলী বলেন, আরব অঞ্চলের জনগণের কাছ থেকে যে মতামত আসছে, সরকারগুলো তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। এমন পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করেছে তারা, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তাদের নীতি এ অঞ্চলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও নীতির সমার্থক।

তিনি বলেন, এতে কেবল ইসরায়েলেই না, তাদের মিত্র আরব দেশগুলোর ওপরও প্রভাব পড়েছে। তাদের সুনাম নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্রিস ডোয়েল বলেন, জনমত নিয়ে আরব দেশগুলো বিচলিত। গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় আরব নেতাদের হতাশ করে তুলবে। জনগণ চাচ্ছে, যাতে এই বোমা হামলা দ্রুত বন্ধ হয়।

আরব আমিরাতের পত্রিকাগুলোতে গাজার সহিংসতার খবর নেই বললেই চলে। বাহরাইন ও সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যমও নিশ্চুপ। ইসরায়েলের সঙ্গে এখনো সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা না দিলেও সে দিকেই এগিয়ে যাওয়ার সূক্ষ্ম আভাস দিয়েছে সৌদি আরব।

চলতি বছরে লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর নিওমে সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এখন আগের তুলনায় দুদেশের সম্পর্ক অনেক গভীরে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি, প্রযুক্তি ও পর্যটন খাতের চুক্তি হয়েছে। ইসরায়েলি একটি গ্যাস ক্ষেত্রের শেয়ার কেনার পরিকল্পনা করেছে আমিরাতের বিনিয়োগ তহবিল। হাইফা বন্দরের কাজ পেতেও অপেক্ষায় আছে দুবাইয়ের বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এতে গাজায় উপত্যকায় ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী সহিংসতা নিয়ে বিবৃতি দিতে ইতস্তত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে বেশ কয়েকটি আরব দেশকে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img