লাইলাতুল কদরে কী আমল করবেন?

লাইলাতুল কদর মহান আল্লাহর এক অফুরন্ত দান। নৈকট্য অর্জনের এক পবিত্র রজনী। পাপ মোচন এবং কল্যাণ প্রাপ্তির এক অনন্য মাধ্যম।

ইরশাদ হচ্ছে: কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরীল আ.) অবতরণ করেন (এই পৃথিবীতে)। তাদের রবের হুকুমে প্রত্যেক ভালো এবং কল্যাণকর বিষয় নিয়ে। শান্তিই- শান্তি সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। (সুরা কদর ৩-৫)

নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তার পক্ষ থেকে সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগি) করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে৷ (বুখারি, হাদিস নং-২০১৪)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান এলে রাসুল (সা.) বলতেন: এই মাস তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছে। এতে একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকল সে যেন সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। আর কেবল হতভাগাই এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং -১৬৪৪, সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং – ২১০৬)

রমজানের কোন তারিখে এই রজনী? 

কুরআন-হাদিসে এর সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা হয়নি। তবে রমজানের শেষ দশকে বিশেষকরে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এমনকি উবাই ইবনে কাব (রা.) সহ একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে ২৭তম তারিখে হওয়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে।
তাই রমজানের শেষ দশকের প্রত্যকটি রাতকেই গনিমত মনে করে বেশি বেশি ইবাদত- বন্দেগি করা উচিত।

রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-২০২০)

আরেক রেওয়াতে এসেছে, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে কদর রজনী অন্বেষণ কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-২০১৬)

লাইলাতুল কদরে কি দোয়া করবেন? 

এ রজনীতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইবে। রহমত,বরকত ও কল্যাণ চাইবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের প্রার্থনা করবে।

আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি নবিজীকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যদি জানতে পারি আজ লাইলাতুল কদর তাহলে আমি কী দোয়া করব? নবিজি বললেন: তুমি বলবে اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني

(আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউ্য়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা`ফু আন্নী) অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (জামে তিরমিযী, হাদিস নং-৩৫১৩)

কিভাবে এ রাত কাটাব?

তাসবিহ- তাহলিল, জিকির, তাওবা- ইস্তেগফার, দোয়া- দরূদ, কুরআন তেলাওয়াত করবে এবং অধিক পরিমাণ নফল নামাজ পড়বে। বিশেষকরে সালাতুত তাসবীহ পড়ার চেষ্টা করবে।

নিজের, পরিবার- পরিজন, আত্মীয় – স্বজন চাই জীবিত হোক বা মৃত হোক এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করবে।

এ রাতে বিশেষ নিয়মে নামাজ পড়ার কি কোন নিয়ম আছে?

নির্দিষ্ট কিছু সুরা দ্বারা বিশেষ নিয়মে নামাজ পড়া যা সাধারণ মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ আছে, শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই৷ বরং অন্যান্য সময়ে নফল পড়ার মত এ রাতেও নফল পড়বে৷ হ্যাঁ, যাদের পক্ষে সম্ভব হবে তারা বড় বড় সুরা দিয়ে দীর্ঘ সময় কেয়াম, লম্বা রুকু এবং দীর্ঘ সময় সেজদা করে নামাজ পড়তে পারেন৷

আল্লাহ তায়ালা সকলকেই যথাযথভাবে এ রাতের কদর করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img