২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দায় যার ওপর চাপিয়ে নাটক সাজানো হয়েছিল, সেই মো. জালাল ওরফে জজ মিয়াকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
জজ মিয়ার পক্ষে করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল দেন।
পাশাপাশি ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ জজ মিয়াকে যে চার বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই কারাভোগ, তাকে দেওয়া আটকাদেশ এবং আটক রাখার সময়টা কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক খোদাবক্স চৌধুরী, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সী আতিকুর রহমান এবং সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমিনসহ ১১ জনকে এ রিটে বিবাদী করা হয়েছে। তাদের চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়।
প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নেতারা তখন হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করে বক্তব্য দেন। হামলার পরের বছর ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে ঢাকায় এনে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করেন, তিনিই এ হামলার হোতা।
হামলার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে এ মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
বিনা অপরাধে চার বছর কারাগারে আটকে রাখায় ‘মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে’ দাবি করে গত ১১ আগস্ট তার পক্ষে ১১ বিবাদীকে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ও আইনজীবী মোহাম্মদ কাউসার।
জজ মিয়াকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেখানে। সেই নোটিশের জবাব না পেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি করেন জজ মিয়া।
ইউআর/