নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও চার সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির জন্য জমি কেনার নামে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন পাটোয়ারী বৃহস্পতিবার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চলতি বছরের ৫ মে দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। এতে ছয়জনকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্রে আরও তিনজনকে যুক্ত করে নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাকে আসামি করা হয়নি।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ড। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯ হাজার ৯৭ ডেসিমাল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধজনকভাবে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেওয়ার জন্য কোনো চাপ ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগের অনুসন্ধানের পর মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট কিংবা এফআরটি দাখিল করেন। এখানে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তকে জেনারেলাইজ করার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য এমএ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী। তদন্তকালে অর্থ লোপাটের সঙ্গে আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, পরিচালক আনোয়ার বেগম ও সৈয়দ একে কামরুজ্জামানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের আসামি করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে এফডিআর করে রাখেন। এরপর তারা এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আসামিরা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন। এ ছাড়া বেআইনি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কমিশন বা ঘুসের আদান-প্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্মসাতের অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেছেন আসামিরা। তাই তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী-স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি কেনা ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক।
ইউআর/