রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ৮০ টন ওজনের গার্ডার সরানো হচ্ছিলো মাত্র ৮৫ টন সক্ষমতার ক্রেন দিয়ে। আর সে কারণেই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
নির্মাণ প্রকৌশলীরা বলছেন, যে কোনো ভারী বস্তু তোলা বা সরানোর ক্ষেত্রে তার ওজনের চেয়ে কমপক্ষে দেড় বা দুই গুণ সক্ষমতার ক্রেন ব্যবহার করতে হয়।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন সচিব আমানউল্লাহ নূরী বলেন, যে ক্রেন দিয়ে গার্ডার তোলা হচ্ছিলো সেটি এর জন্য সক্ষম কিনা এটা তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে জানা যাবে। জানতে পেরেছি, ওই ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওপরে তোলা হচ্ছিল না, শুধু স্থানান্তর করা হচ্ছিল।
চালককে আটক করলে বিস্তারিত জানা যাবে। আমরা পুলিশকে বলেছি চালককে আটক করতে।
‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার (১৫ আগস্ট) দুর্ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ ওইদিন কাজ বন্ধ থাকার কথা’।
ঠিকাদারদের দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি করে নির্মাণ প্রকৌশলীরা বলছেন, সড়কের মধ্যে উন্নয়ন কাজ চললে সেখানে বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য আলাদা বাজেট থাকে। কিন্তু তারা বাইপাস নির্মাণ না করায় এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে।
এ দুর্ঘটনার পরই প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী যাদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বিআরটির প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলামও।
বিআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা যথাযথ নয় বলে স্বীকার করেছেন বিআরটি পরিচালক ও সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান।
তিনি জানান, ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওঠানোর সময় সবগুলো লেন বন্ধ করে একটি লেনে গাড়ি চলাচলের জন্য রাখা হয়। কিন্তু সেখানে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে যে লেনে গাড়ি চলার কথা না সেখানেও গাড়ি চলে যায়। তাদের যে সেইফটির অভাব আছে তা আমি সেদিনও মিটিংয়ে বলেছি। মন্ত্রণালয়ে আমাদের একটা রিভিউ মিটিং হয়েছে যেখানে এডিবির প্রতিনিধিও ছিলেন। সেখানে সেইফটি অডিট করার জন্য আমি মিটিংয়ে বলেছি। এটা নিয়ে গতকালও একটা মিটিং হয়েছে।
এর আগেও ‘নিরাপত্তার অভাবের’ বিষয়টি তারা ঠিকাদারকে প্রায়ই বলেছেন বলে দাবি বিআরটির এ পরিচালকের।
সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে প্রাইভেট কারে গার্ডারচাপায় প্রাণ হারান ৫ জন।
সোমবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাড়িটিতে মোট সাত যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন।
নিহত পাঁচজন হলেন- রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), ফাহিমা, জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামে নবদম্পতি গুরুতর আহত হন।
ইউআর/