স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালু করাসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। রোববার (২ মে) সকাল থেকে দেশের সব টার্মিনালে একযোগে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর গাবতলীতে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন পরিবহন শ্রমিকরা। সমাবেশ শেষে তারা গাবতলী ও এর আশপাশ এলাকায় মিছিল করেন। তাদের দাবি, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, পিকআপ চললে গণপরিবহন চলবে না কেন?
এর আগে শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
সংগঠনটির ভাষ্য, করোনা মহামারিতে সবকিছু চালু থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে ৫০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
গণপরিবহন চালুর দাবি বাস্তবায়নে রোববার বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি মঙ্গলবার সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, বাংলাদেশে সড়কপথে প্রায় ৭৫ শতাংশ যাত্রী ও ৬৫ শতাংশ পরিবহন হয়ে থাকে। এ খাতে প্রতিদিন ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করে থাকেন।
তিনি বলেন, করোনায় মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। আমরা লকডাউনের বিরোধিতা করছি না। কথা ছিল, লকডাউনের সময় মানুষের চলাচল, শ্রমঘন শিল্প, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোর্ট-কাচারি সব বন্ধ থাকবে। সেই হিসেবে গণপরিবহন বন্ধ থাকলে পরিবহন শ্রমিকের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে লকডাউন শিথিল করায় গার্মেন্টস, শপিংমল, কাঁচাবাজার ও অফিস-আদালত চলছে।
গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিকল্প যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ অনিরাপদভাবে চলাচল করছে দাবি করে তিনি বলেন, এতে যেমন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে তাদেরকে হয়রানিরও শিকার হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ৫০ লাখ সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। উপার্জনের পথ বন্ধ হওয়ায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় চাল বিক্রির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা ও গণপরিবহন চালু ছিল।
এরপর সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে যায়, যাতে বন্ধ ছিল গণপরিবহন এবং দোকানপাট। সরকারের সর্বশেষ নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৫ মে পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকছে।