রাজশাহীতে দুই কৃষকের আত্মহত্যা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।

রবিবার (৩ এপ্রিল) বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৪ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু।

তিনি বলেন, ‘আমি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছি। জমিতে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রেজিস্ট্রার মেইনটেইন করা হয় না। দায়িত্বশীলদের তদারকির অভাব ছিল। পানি বণ্টনে অনিয়ম করেছেন নলকূপ অপারেটর। আমরা এগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি।’

দুই কৃষক কেন বিষপান করেছেন সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি জানিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘তাদের মৃত্যুর বিষয়টি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া বলা যাবে না। আমরা বলতে পারি না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দুজনের পরিবার যে অভিযোগ করেছে, তা আমাদের প্রতিবেদনে আছে। পাশাপাশি এলাকার অন্য কৃষকদেরও বক্তব্য আছে প্রতিবেদনে।’

কমিটির অপর সদস্য রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ‘আমরা দুটি ইস্যু নিয়ে তদন্ত করেছি। এর মধ্যে একটি আত্মহত্যা, অপরটি সময়মতো পানি না পাওয়া। আত্মহত্যার বিষয়ে দুটি মামলা হয়েছে। মামলার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনসহ ঘটনা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। সেগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আত্মহত্যাকারী দুই কৃষকের একজনের (রবি মারান্ডির) কার্ড ছিল না। তিনি অন্যের কার্ড ব্যবহার করে পানি নিতেন। তবে যে গভীর নলকূপের অধীনে ঘটনা, সেখানে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। নলকূপ অপারেটর পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করেছেন। এটি তদন্ত করে পেয়েছি। এমনকি সেচ কমিটিও নেই। কমিটি গঠনের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।’

গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৭) ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭) বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়।

পরিবারের দাবি, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন দুই কৃষককে বোরো ধানের জমিতে পানি না দিয়ে বিষপান করতে বলেছেন।

এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ২৭ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করে। ২৯ মার্চ কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে ঘটনা তদন্ত করেন। সেই তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে শনিবার (২ এপ্রিল) রাতে সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন রবিবার বিএমডিএ সাখাওয়াতকে বরখাস্ত করে। একই দিন সাখাওয়াতকে আদালতে হাজির করে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত সাখাওয়াতকে কারাগারে পাঠালেও রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হতে পারে।

এ ঘটনা তদন্তে বিএমডিএও আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতেই রবিবার নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img