ফেক নম্বর থেকে কল করে বিকাশের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পুরোনা হলেও এবার বিকাশের হেল্পলাইন (১৬২৪৭) নম্বর থেকে কল করে বিভিন্ন দফায় বিকাশ’র এজেন্ট থেকে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিকাশ এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রতারণার এই চক্রটিকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন বিকাশের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ অঞ্চলের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর) টিপু।
ভুক্তভোগী তৌহিদ আলী রাশেদের অভিযোগ, সু-পরিকল্পিতভাবে কয়েক দফায় তার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তার দাবি, স্থানীয় বিকাশ এসআর হেড অফিস থেকে কল আসবে ও তথ্য হালনাগাদ করবে বলা এবং হুবহু হেল্পলাইন থেকে ফোন আসা প্রমাণ করে যে এর সাথে বিকাশের কোন চক্র জড়িত আছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে (২.১৮ মিনিট) বিকাশের হেল্পলাইন (১৬২৪৭) থেকে কল করা হয় ভুক্তভোগীর এজেন্ট নম্বর ০১৭১৩—৮৮৬ এ। বিকাশের হেলপ-লাইন থেকে বলা হয়, ‘আমি বিকাশ অফিস থেকে বলছি, অ্যাপস আপডেট ও নির্দেশনার জন্য আপনাকে অন্য ফোন থেকে কল করা হচ্ছে, কলটি রিসিভ করুন।’ ১ মিনিট পর ২.১৯ মিনিটে ০১৮২৫২৮৮১২৩ থেকে ফোন করে অ্যাপস আপডেট করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজেন্ট ব্যবসায়ী বিশ্বাস না করাতে এর ৫ মিনিট পর ব্যক্তিগত (০১৭০৫৪২১৪৫২) নম্বর থেকে কল করে অ্যাপস আপডেট করতে অফিস থেকে ফোন দিবে বলে জানায় স্থানীয় সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর) টিপু।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বিকাশ হেল্পলাইন (১৬২৪৭) ও স্থানীয় এসআর টিপুর কথায় আস্থা রেখে নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ০১৬১৪-১৫৫৫১৮, ০১৭৬৬-১০৯০৮৫. ০১৭৮১-৩২৩২৪০ ও ০১৯২৭-৪৭৮৪১৯ নম্বরে বিভিন্ন দফায় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা পাঠান এজেন্ট ব্যবসায়ী রাশেদ। টাকা বুঝে পাওয়ার পর প্রতারক কল কেটে দেয়। পরে প্রতারকের মুঠোফোন ও টাকা পাঠানো নম্বরগুলোতে একাধিকবার কল করলে নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হেল্পলাইনে কল করে অভিযোগ করলে (অভিযোগ নং-১১৩৩৪৬৮৯ ও ১১৩৩৭৪৬৩) বিকাশের হেডঅফিস সমস্যা সমধানের জন্য দুই দিন সময় নেয় বিকাশ অফিস।
এ বিষয়ে বিকাশের চট্টগ্রামের ব্রাঞ্চ অফিস চৌমুহনীতে অভিযোগ দায়ের করলেও দেড় মাসেও কোন উদ্যোগ নেয়নি বিকাশ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী তৌহিদ আলী রাশেদ বলেন, ‘আমি নতুন ব্যবসায়ী। গত ২৬ আগস্ট আমি ব্যবসায়িক সিমটি (এজেন্ট) পেয়েছি। তার ঠিক ৫ দিনের মাথায় স্থানীয় এসআর ও বিকাশ অফিসের প্রতারক চক্র আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আমার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের নাম যে ‘আম শপ’ এবং আমি কবে সিম পেয়েছি তা বাইরের কোন প্রতারক জানার কথা নয়। কিন্তু বিকাশ অফিসের হেল্পলাইন থেকে ফোন করে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ও কবে সিম পেয়েছি সবই বলেছে ঐ প্রতারক। তাতেও আমি বিশ্বাস না করায় ওইদিন স্থানীয় এসআর টিপু তার পারসোনাল মুঠোফোন থেকে ফোন করে অ্যাপস আপডেট করার জন্য অফিস থেকে ফোন করবে বলায় আমি তাদের সাথে কথা বলেছি এবং তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিকাশের স্থানীয় ব্রাঞ্চ (চৌমহনী) অফিসে কয়েকধাপে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। অনেকবার তাদের অফিস প্রধানের সাথে কথা বলতে চাইলে বা তার মোবাইল নম্বর চাওয়া হলে তারা সাঁড়া দেয়নি। এছাড়া ডবলমুরিং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৪৭৮) দায়ের করেছি। এ নিয়ে গত দেড় মাসে পুলিশও আমাকে কোন আপডেট দিতে পারেনি।’
এ বিষয়ে স্থানীয় এসআর টিপুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নম্বর ক্লোন করে রাশেদকে ফোন করা হয়েছে। আমার কল লিস্টে তার নম্বর নেই।’ তার আসল নাম সুলতান আহমেদ টিপু জানিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের অফিস বড়পোল এলাকায়। আপনি আসেন, আমাদের সিনিয়র অফিসারদের সাথে কথা বলেন। ওনারা আপনাকে ভালো বলতে পারবে।’
এদিকে, ৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে প্রতিবেদক সরেজমিনে চৌমুহনী বিকাশ ব্রাঞ্চে গেলে বিকাশ প্রতিনিধিরা নানা টালবাহানা করেন। বারবার তাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার/ ইনচার্জের সাথে প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে তাতেও নানা অজুহাত উপস্থাপন করেন। পরে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ওই বিকাশ অফিস (চৌমুহনী) ইনচার্জ ইমতিয়াজ কথা বলেন।
তিনি জানান , ‘আমরা এই বিষয়ে জিডির কপি এবং অভিযোগ পেয়েছি। এটি হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে হেড অফিস সিদ্ধান্ত জানাবেন।’ প্রতারণায় এসআর বা অফিসের কোন চক্র জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসআর বিকাশের স্টাফ নয়। হেলপ-লাইন হুবহু ক্লোন করার কোনো সুযোগ নাই। এ বিষয়ে আপনি হেড অফিসের সাথে কথা বলতে পারেন।
বিকাশ হেড অফিসের কর্পোরেট কমিউনিকেশন প্রধান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা সামশুদ্দিন হায়দার ডালিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান, বিকাশ হেল্প-নম্বর ক্লোন করা সম্ভব নয়। তবে কোন প্রকার বক্তব্য ও তথ্য জানতে চাইলে বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে মেইল করার জন্য অনুরোধ করেন ।
পরে গত বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকালে এ সংক্রান্ত একটি মেইল করলেও তিনি পরের দিন বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) ফিরতি মেইল দিবে বলে জানালেও তা দেয়নি। ৯ অক্টোবর, শনিবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রবিবার বিকাল বা সোমবারে মেইল করে তার বক্তব্য দিবেন বলেও জানান তিনি।
গতকাল ১১ অক্টোবর, সোমবার দুপুর ১টার দিকে কয়েকবার ফোন করা হলেও বিকাশ হেড অফিসের কমিউনিকেশন প্রধান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা সামশুদ্দিন হায়দার ডালিম’র মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দুপুর ২.৩০টার থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিম (৬ অক্টোবর) প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিকাশ প্রতারণার সাধারণ ডায়েরি আমি পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিকাশ অফিস (চৌমুহনী) সময় চেয়েছে, তাই দেরি হচ্ছে।’