দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে দেশের কোথাও কোথাও কিছুটা কমেছে মৃত্যু আবার কোথাও বেড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। শনিবার (১৪ আগস্ট) সকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনার উপসর্গে ৬৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তবে আইসিইউ সংকটে মুমূর্ষু রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। গ্রামের রোগীরা শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসায় তাদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে রোগীর চাপ সামলাতে দিশেহারা হাসপাতালগুলো। তৈরি হয়েছে শয্যা ও অক্সিজেন সংকট। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এ পর্যন্ত পাওয়া দেশের বিভিন্ন জেলার করোনার চিত্র তুলে ধরা হলো।
ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন করোনা শনাক্ত হয়ে এবং ১৩ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ময়মনসিংহের ১৫ জন, নেত্রকোনার ৪ জন, শেরপুরের ২জন, জামালপুর ও টাঙ্গাইলের একজন করে রয়েছেন।
করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, ৪০২ আসনের ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৩৯৯ জন। এর মধ্যে ২২ জন আইসিইউতে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬ জন।
এদিকে জেলায় ৬০০ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৩৯ জনের শরীরে। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
রাজশাহী:
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন মারা গেছেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ১১ জনের মধ্যে রাজশাহীর বাসিন্দা ৪ জন, নাটোরের ৪ জন, নওগাঁর ২ জন এবং কুষ্টিয়ার একজন বাসিন্দা রয়েছেন।
মৃতদের মধ্যে ৯ জন করোনা পজিটিভ, একজন উপসর্গ নিয়ে এবং একজন করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর মারা যান।
গত একদিনে করোনা ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন। তাদের নিয়ে রামেকে ৫১৩ শয্যার বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৩৩০ জন।
গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলার ১০৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের করোনা পজিটিভ আসে। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।
চাঁদপুর:
চাঁদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন করোনায় এবং অন্যরা উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, নানা রোগে ভর করা রোগীরা করোনায় সংক্রমিত হওয়ায় তাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার স্বস্তির খবর জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৩ জনের নমুনায় ৭৬ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এতে সংক্রমণের হার ২৬ শতাংশ। যা গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যানে ইতিবাচক দিকে মোড় নিচ্ছে।
এদিকে চাঁদপুরে সব মিলিয়ে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৩ হাজার ১২৭ জন। আর করোনায় মারা গেছেন ২২০ জন। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে আরও প্রায় ৬০০ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে, এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৫ জনের নমুনায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৭০ জন।
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা মেডিকেলে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা-উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও:
ঠাকুরগাঁও গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
নড়াইল:
নড়াইলে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে আটজন এবং উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. মেজবাউল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগের দিন করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে এ হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা ছিল তিনজন। একই সঙ্গে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির চাপও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৯১ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫৪ জন। আর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৩৭ জন।
এদিকে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯২টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন করে ৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
জেলায় এ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৩৫ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ২৬৪ জন। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৬৬২ জন।
নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৬২ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৩৪ জন, দৌলতপুর উপজেলায় ৫, ভেড়ামারা উপজেলায় ২২ ও মিরপুর উপজেলায় একজন রয়েছেন। তবে কুমারখালী ও খোকসা উপজেলায় কোনো করোনা শনাক্ত রোগী নেই।
এখন পর্যন্ত জেলায় ৯৩ হাজার ৬৪২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৮৮ হাজার ৫০৮ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮০৯ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ২০৬ জন। হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ২ হাজার ৬০৩ জন।
কুমিল্লা:
কুমিল্লায় করোনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।