এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। বাংলা সিনেমায় দেখা মিশা সওদাগর কিংবা ডিপজলের মত চরিত্ররা যেন বাস্তবে নেমে এসেছে ঢাকার রাস্তায়। এলাকায় নতুন কোন ভাড়াটিয়া আসলেই টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাসায় ঢুকে করা হয় হেনস্তা। তারা একে বলে ‘ফিটিং দেওয়া’। শুধু তাই নয়, রাস্তার মোড়ে চলে দিন-রাত আড্ডা, নারীদের দেখে করা হয় ইভটিজিং।
রাজধানীর হাজারীবাগ ও জিগাতলা এলাকায় এভাবেই ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে ‘লাভ লেন’ নামক কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। নব দম্পতিদের বাসায় হানা দিয়ে দেখতে চাওয়া হয় কাবিননামা। যেন অরাজগতায় ভরা এক নগরী এই ঢাকা। রিকশায় তরুণ-তরুণীদের একসাথে দেখলেই পিছু নেয় এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। এছাড়া চাঁদাবাজি যেন নিত্য দিনের ঘটনা। আর এসব তথ্য পৌঁছে দিতে রয়েছে তাদের নিজস্য ‘গোয়েন্দা’ দলও।
কিশোর গ্যাংয়ের এমন অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় জিগাতলার তল্লাবাগের বাসায় ঢুকে তাকিম-জ্যোতি দম্পতিকে মারধর করা হয়। জ্যোতি বলেন, ওরা ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। এ সময় আমি প্রতিবাদ করতে গেলে, ওরা বলতে থাকে, তুই যত চিৎকার করবি, তোর স্বামীকে তত বেশি মারব।
কোনো পূর্ব শত্রুতা নেই আগে থেকে, কেউ কাউকে চিনতেনও না। ওই দম্পতি বাসা ভাড়া নেওয়ার দুদিন পরই তাদের জীবনে নেমে আসে সেই ভয়ংকর রাত। ভাঙচুর করা হয় ঘরের আসবাবপত্র এবং হাতিয়ে নেওয়া হয় নগদ টাকা-পয়সাও।
এ ঘটনা জানাজানি হলে গুম করার হুমকিও দেয় গ্যাং সদস্যরা।
জুলাইয়ের ৫ তারিখে পুরো ঘটনা ঘটিয়ে ৯ জনের দলটি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ওই বাসা থেকে নেমে যায়। এ সময় তারা বিজয়ীর বেশে উল্লাস করতে থাকে। এর আগে রাত ৮টার পর থেকে একে একে ওই বাসার নিচে জড়ো হতে থাকে গ্যাং সদস্যরা। এর সবই ধরা পড়ে এলাকার সিসি টিভি ক্যামেরায়। পরদিন হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন তাকিম। কিন্তু এখনও বেশির ভাগ আসামি রয়েছে পলাতক। যদিও সিসিটিভি ক্যামেরায় সবাইকেই চিহ্নিত করা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাংটির দখলে আছে এলাকার ইন্টারনেটসহ বেশকিছু ব্যবসা।
অভিযোগ আছে এই বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন ইসমাইল হোসেন তপু। জানা গেছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে সরকার দলীয় একটি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে বাড়ির মালিকও ভয়ে আছেন। মামলার সাক্ষী হওয়া তো দূরের কথা গনমাধ্যম কর্মীদের সাথেও বলতে রাজি নন তিনি।
বাড়িওয়ালা বলেন, আমি ফ্যামিলি নিয়ে থাকি, আমার মা একজন বয়স্ক মানুষ। এই এলাকায় এ ঘটনা নতুন নয়, স্থানীয়রা বলছেন এর আগে এক ভাড়াটিয়া ভয়ে এলাকাই ছেড়েছেন।
সূত্র বলছে, রাজধানীতে এমন শতাধিক গ্যাং আছে। পুলিশের রমনা ও মতিঝিল জোনেই এমন গ্রুপের সংখ্যা ১৯টি। তাদের জ্বালায় অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের দাবি, এমন অপরাধ কমাতে তারা কাজ করছেন।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা এসব তরুণকে ব্যবহার করছে, তাই কমানো যাচ্ছে না এমন সব অপরাধ।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী গোষ্ঠী স্থানীয়ভাবে অনেক অপরাধে এসব কিশোরদের ব্যবহার করে থাকে। এই বিষয়টা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর জন্য সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অভিভাবক, পরিবার সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়া প্রত্যেক পরিবারকে আরও সচেতন হওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।