ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০২৪:
ভারতে পালানোর সব চেষ্টাই করেছিলেন তিনি। টাকা যেমন খরচ করেছিলেন- তেমনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব- এমন সকল বন্দর এড়িয়ে ভিন্ন কৌশলে হেঁটেছিলেন। গোপনে ভারতীয় সীমান্তে চলেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের কি লিখন, শেষ রক্ষা হয় নি। ভারতীয় সীমান্তে চলে যেতে পারলেও বাংলাদেশে তাকে চলে আসতে হয়েছে। এই ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। শুক্রবার রাতে সিলেটের কানাইঘাট দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।
রাত ১০ টার দিকে বিজিবি সদস্যরা তাকে ধরার সময় ভিডিও ক্যামেরায় তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, শামসুদ্দিন মানিক জঙ্গলে কলা পাতার বিছানায় শুয়ে আছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সাদ্দামের বাড়ি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তঘেঁষা দনা পাতিছড়া গ্রামে। সাদ্দাম বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে থাকেন। তবে এখন সাদ্দাম কোথায় আছেন, সেটা জানি না।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার দিনের কোনো এক সময় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সে সময় স্থানীয়রা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তার নাম শামসুদ্দিন মানিক পরিচয় দেন। পরে তাকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আটকের সময় স্থানীয়দের মানিক জানান, তার সঙ্গে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট, নগদ টাকা, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।
এ সময় তাকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি ভারতে গেছেন বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য নয়। তিনি এটিও জানান যে, তিনি টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি সদস্যদের কাছে মানিক স্বীকার করেছেন যে, তিনি ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ভারতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুজন লোক ভারতের ভেতরে নিয়ে তাকে মারধর করে ৬০ থেকে ৭০ লাখ অতিরিক্ত টাকা লুটে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়।
এক ভিডিওতে দেখা যায়- বিচারপতি মানিককে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এবং তিনি সামনে থাকা ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে ভারতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন কিন্তু তাদেরকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন। তারা বলেন যে, আপনাকে নিরাপত্তা দেওয়াটা এখন বেশি প্রয়োজন।
কেন পালাচ্ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মানিক বলেন যে, না পালালে তাকে প্রশাসনের ব্যক্তিরা গ্রেফতার করবে বা মেরে ফেলবে।। তিনি বলেন, ভয়ে পালাচ্ছি। কার ভয়ে জানতে চাইলে বলেন, প্রশাসনের।
বিচারক হিসেবে শামসুদ্দিন মানিক সবসময় ছিলেন বিতর্কিত। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আদালতকে অন্যায়ভাবে ব্যবহারের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আয়োজিত টকশোতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে নারী সঞ্চালকের ওপর চড়াও হন তিনি। টকশো শেষ হলেও মেজাজ দেখাতে থাকেন তিনি। সঞ্চালককে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে বারবার ক্ষোভ ঝাড়তেই থাকেন।
তার সম্পর্কে শোনা যায় যে- একবার তিনি এক ব্যক্তিকে আদালত অবমাননার দণ্ড দেন শুধুমাত্র তাকে স্যালুট না দেবার জন্য।
তার বিরুদ্ধে বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও আছে।
এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ১৯৭৮ সালে আনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে কাজ শুরু করেন। তার পুরো কর্মজীবন আওয়ামীলীগের দয়ায় পূর্ণ ছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০১ সালে অতিরিক্ত বিচারকের মর্যাদা দেয়া হয় তাকে। ২০০৯ সালে পূর্ণ বিচারক, ও ২০১৩ সালে তাকে আপিল বিভাগের বিচারক নিযুক্ত করে আওয়ামীলীগ সরকার। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শোতে নিজেকে আইন অঙ্গনে কাজ করা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে দাবি করেন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসেনের আদালতে তাকে তোলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাবেক বিচারপতি মানিককে আদালতে তোলার সময় অনেকে তার দিকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এসময় কয়েকজন হামলার চেষ্টাও চালান। পরে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।