ভারতের ওডিশা রাজ্যের বালাসোরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে রাতভর অভিযান চালিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া তিনটি ট্রেনের বগির নিচে আটকে পড়া মানুষদের বের করে আনতে ওয়েল্ডিং গ্যাস কাটার ও ইলেকট্রিক কাটার ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভুবনেশ্বরের কর্মকর্তারা বলেন, ১ হাজার ২০০ মানুষ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০টি বাস এবং ৪৫টি মোবাইল হেলথ ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। ট্রাক্টরসহ সব ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে মৃতদেহগুলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
লাইনচ্যুত বগিগুলোর ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনতে ‘গ্যাস কাটার’ ব্যবহার করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এক যাত্রী বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে কিছু কিছু দৃশ্য এতটাই ভয়াবহ যে বর্ণনা করা কঠিন।
ঘটনাস্থলে রেললাইন অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রেনের ছিন্নভিন্ন বগিগুলো এখানে–সেখানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। আবার দেখা গেছে, কিছু বগি একটি অপরটির ওপর উঠে গেছে, আবার কিছু বগি উল্টে আছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেরহামপুরের বাসিন্দা পীযূষ পোদ্দার কর্মস্থলে যোগ দিতে করমন্ডল এক্সপ্রেসে করে তামিলনাড়ু যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে পীযূষ বলেন, ‘ঝাঁকুনি লাগার পর হঠাৎই দেখলাম ট্রেনের বগি এক পাশে কাত হয়ে যাচ্ছে। বগিগুলো লাইনচ্যুত হওয়ার সময় আমরা অনেকে ছিটকে পড়েছিলাম। হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার পর দেখলাম চারপাশে লাশ পড়ে আছে।’
গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওডিশার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এই ট্রেন দুর্ঘটনাকে ২০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। প্রথমে কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওডিশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। চেন্নাইগামী শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওই এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটির কয়েকটি বগি একটি পণ্যবাহী ট্রেনের বগির ওপরও আছড়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রচণ্ড রকমের শব্দ শুনে তারা ঘটনাস্থলে যান এবং দেখতে পান বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়েছে। সেগুলোই এতটাই বিধ্বস্ত হয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছিল ইস্পাতের স্তূপ জমে আছে।
বালাসোর জেলা হাসপাতালটি দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক যুদ্ধাঞ্চল। হাসপাতালের শয্যাগুলো ভরে গেছে। করিডরে রাখা স্ট্রেচারে আহত ব্যক্তিদের শুইয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসাকর্মীরা তাঁদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। আহত ব্যক্তিদের অনেকে ওডিশার বাইরের রাজ্যের বাসিন্দা হওয়ায় যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে।