ভোক্তাদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে খেয়াল-খুশি মতো ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটা পুরোপুরি অন্যায় ও অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বুধবার দুপুরে ‘ওষুধের অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
এ সময় ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া প্রমুখ।
গোলাম রহমান বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অনেক অব্যবস্থাপনা রয়েছে, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমাদের অনেক অর্জনও রয়েছে। দেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন দেশের চাহিদা মেটাতে ৯৫-৯৮ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এখন আমরা ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদন করি। এছাড়া আমাদের দেশে উৎপাদিত ওষুধ ১২৪টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কোভিডের মতো একটা মহামারি বাংলাদেশ সরকার যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে, যা সারা বিশ্বেই নজিরবিহীন। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় এনে সুরক্ষা দেওয়া অনেক বড় ব্যাপার।
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোতেও সেবার মান এখন অনেকটাই বেড়েছে। এগুলো সবই ইতিবাচক দিক। তবে এর বাইরে অনেকগুলো নেতিবাচক দিক আছে, যা আজকের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ক্যাব সভাপতি আরও বলেন, আমাদের দেশে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া, সেটি যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত কিনা সন্দেহ আছে। এক সময় দুই শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। কিন্তু পরবর্তীতে তা কমিয়ে ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করছেন তারা। কারণ এর বাইরে যে ওষুধগুলো রয়েছে, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ অনেকটা নির্ভর করে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপরই। এতে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে আমাদের ধারণা।
গোলাম রহমান বলেন, দেশের ওষুধ শিল্প ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। স্বাধীনতার আগে দেশে মাত্র ২-৩ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। সেসময় ওষুধ আমদানি করে বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ করতে হতো। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৭০ ভাগ ওষুধ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতির পর দেশে ওষুধ তৈরির কারখানা চালু হয়। এরপর এ শিল্পকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এখন চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও ওষুধের বাজার বিস্তার লাভ করেছে।
ক্যাব সভাপতি আরও বলেন, জেনেরিক নামে যে দুই শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের ছিল, তা পুনর্বহাল করা হোক। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে কোনো রকম জবাবদিহিতা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির যে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে বর্তমানে ঔষধ প্রশাসনের দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করতে হবে। সম্প্রতি স্যালাইনের যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, এটা একটা খুবই বাজে নজির, যেখানে ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা আপত্তি জানানো সত্ত্বেও তা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বলে মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা শুধু অনৈতিক নয়, এটা একটা বেআইনি কাজ।
এর আগে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বলেন, দেশে ওষুধ শিল্প বিস্তার লাভ করলেও ওষুধ তৈরির জন্য শতকরা ৯৭ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ কাঁচামাল ভারত ও চীন থেকে আসে। উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকেও কিছু কাঁচামাল আসছে। তবে নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছে, যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল রয়েছে। তবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হলে এ সুবিধা বহাল থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।