পুলিশের এসআই পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে টেলিফোনে ভয়ভীতি দেখানো, এবং ট্রাকে করে ড্রেজিং এর যন্ত্রপাতি চুরি করার চেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার চার নং আসামি করা হয়েছে বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনসুর আলম পাপ্পী।
শনিবার ( ৫ নভেম্বর) দুপুরে
ভুক্তভোগী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান
এম হাসান বিল্ডার্সের ম্যানেজার ফখরুল ইসলাম বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করে।
হাসান বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান জানান, গত সপ্তাহে বেশ কয়েকবার পুলিশের এসআই রোকনুজ্জামান পরিচয় দিয়ে ফোন করেন এক ব্যক্তি । শুক্রবার বিকেলে কালুরঘাটের ইস্পাহানি রোড় এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের ড্রেজিং এর ফাইপসহ চার লক্ষ আশি হাজার টাকার যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেবার চেষ্ঠা করে একটি চক্র। পরে পুলিশ গিয়ে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করে। মুল আসামী রোকন, পাপ্পি, ববি, এখনোও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুর রহমান বলেন, ‘ কালুরঘাট এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে একজন ব্যবসায়ীকে ফোন করে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। গত শুক্রবার চক্রটি পুলিশ পরিচয়ে কালুরঘাট এলাকায় ড্রেজারের যন্ত্রপাতি চুরির চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে ওই চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ড্রাইভার ও একজন চালক। ‘
তিনি আরও বলেন, পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হাসান বিল্ডার্সের ম্যানেজার ফখরুল , মামলা করেছেন ৷ ‘
জানা যায়,চুরির চেষ্টাকালে ঘটনাস্থলে থাকা দারোয়ান মুসলেহ ড্রেজিং এর যন্ত্রপাতি গাড়ি তোলার সময় বাধা দেয়। এসময় তাকে মোবাইল ফোনে জনৈক ব্যক্তির সাথে কথা বলিয়ে দেয়া হয়। সেই ব্যক্তি পুলিশের এসআই রোকন পরিচয় দিয়ে যন্ত্রপাতি ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে বলেন। না হলে দাড়োয়ানকে বেঁধে থানায় নিয়ে যাবার হুমকি দেয়া হয়।
ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী এম হাসান বিল্ডার্সের পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ গত কয়েকদিন ধরে একটি নাম্বার থেকে ( ০১৮৭৪৮……..৪৮) পুলিশের এসআই রোকন বলে ফোন দিয়ে আসছিলেন এই প্রতারক। শুক্রবার একই প্রতারক কালুরঘাটের একটি সাইটে ড্রেজিং এর ফাইপসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরানোর চেষ্টা করলেও তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় নি চান্দগাঁও থানার পুলিশ। এসআই রোকন ফোন করে বলে আসছিলেন সাইটে চোরাই মাল রাখা আছে। তার সাথে (এসআই রোকন) বসে সুরাহা করতে। এমন ঘটনার নেপথ্যে পাপ্পি ও ববি নামের দুইজন ‘
এম হাসান বিল্ডার্সের পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, রোকনুজ্জামান, মনসুর আলম পাপ্পী, ববিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেবার পর মামলা রুজু করা হয়েছে। ‘
দারোয়ান ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় চট্টগ্রাম নগরীর কালুঘাট এলাকার ইস্পাহানি রোড় এলাকায় ড্রেজিং ব্যবসায়ীদের ড্রেজারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ চুরিসহ একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছে। মনসুর আলম পাপ্পী নামের এক বালু ব্যবসায়ী সাবেক মেরিন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হাফিজ থেকে ড্রেজার ভাড়া নিয়ে তা কর্ণফুলী নদীকে লুকিয়ে রাখে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের অভিযানে পাপ্পির কাছে থাকা সব ড্রেজার ও ফাইপ উদ্ধার করা হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে যেসব যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেন।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে এলাকার বিভিন্ন বালু মহালের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মনসুর আলম পাপ্পী নামের আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী ব্যক্তি। সরকারের কাছ থেকে বৈধভাবে ইজারা নেওয়া বালুমহাল থেকেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে পাপ্পীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় পুলিশের নাম ব্যবহার করে ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়া এবং মালামাল লুট করার চেষ্টা করা প্রতারক রোকনুজ্জামান বালু সম্রাট মনসুর আলম পাপ্পীর ও ববি’র সহযোগী। তারা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো।