প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ৪১ শতাংশই আসে হুন্ডিতে: অর্থমন্ত্রী

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৪১ শতাংশই আসে হুন্ডির মাধ্যমে। বৈধপথে আসে ৫৯ শতাংশ। এমন তথ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এটি তার নিজস্ব একটি গবেষণা। তবে এখনো হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসছে। তা বৈধপথে আনা সম্ভব হলে দেশ ও উপার্জনকারী সবাই উপকৃত হবে। এজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনা উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

ভার্চুয়ালি ব্রিফিংয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন- সার, গ্যাসের মূল্য দাতা সংস্থা আইএমএফের ঋণের শর্তের কারণে বাড়ানো হয়নি। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এটি বেড়েছে। আইএমএফ এ ধরনের কোনো প্রশ্ন আমাদের কাছে উপস্থাপন করেনি। আপনারাই পত্রিকায় লিখছেন, এটা নিয়ে আমি উত্তর দেব না। এটা কেন আপনারা বলছেন আমি জানি না।

এ সময় অর্থমন্ত্রী আশার আলো দেখিয়ে বলেন, শিগগিরই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতায় ফিরে আসবে। মূল্যস্ফীতি আগামী দু-এক মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসবে। ডলারের দামও কমবে।

বিনিয়োগে বড় বাধা দুর্নীতি- মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে প্রকাশিত এ তথ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি হয়, এটা জানা নেই। আপনাদের কারও কাছেও হয়তো নেই। কিন্তু অনুমান করে বলতে পারেন যে, দুর্নীতি হচ্ছে।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ফলাফল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এ উদ্যোগটি দেশের মানুষ গ্রহণ করবে। অনুরোধ থাকবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ, আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সবাই যেন আরও উদ্দীপনা নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করেন। যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা (কালো টাকা) আছে, সেটি এই স্কিমের আওতায় এনে স্থায়ীভাবে আগামী প্রজন্মের জন্যই রাখা উচিত। এটি গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত আয় যুক্ত হয়ে আরও শক্তিশালী করবে।

হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বৈধ পথে অর্থ এলে সব জায়গায় তার রেকর্ড থাকে। জবাবদিহি করা যায়। অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিটেন্স আসুক- এটা সবাই চাই। কিন্তু হুন্ডিতে অর্থ এলে তার বৈধতা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে যদি টাকা নিয়ে আসেন সেটিকে অবৈধ বলব না, সেটি কালোটাকা। যারা হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে আসেন, তারা সবসময় বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন। তাদের ধীরে ধীরে অনেক টাকা হয়ে গেলেও সেটি কিন্তু রেকর্ড করতে পারছেন না। কখনো ইনকাম ট্যাক্স বা রেগুলেটরি অথরিটি এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবেন না।

তবে যেন কম আসে সেটি নিরুৎসাহিত করতে আমরা তাদের সুফলটা বলছি। তাদের জন্য প্রণোদনা না শুধু, স্বীকৃতিও দেওয়া হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের ভবিষ্যৎ প্রজš§ও কিন্তু এটি সুন্দরভাবে ভোগ করতে পারবে। এতে প্রশ্ন বা দায়বদ্ধ থাকবে না। রেমিট্যান্স আমাদের অন্যতম একটি খাত। রপ্তানি বাণিজ্যের পরে রেমিট্যান্স অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করছে।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব নিয়েছি ওই সময় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই কত বছর আগে এটি। এরমধ্যে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়েছি। মহামারি মোকাবিলা করেছি। সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছি, এটি সুন্দরভাবে করার জন্য। এখন আমরা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এটিও সুন্দরভাবে মোকাবিলা করব। আরও মাসখানেক পর এর প্রতিফলন দেখতে পারব। আমদানি করে এখন যা নিয়ে আসছি, সেগুলো দেশে পৌঁছালে সঙ্গত কারণে অন্যান্য জিনিসের দামও কমবে। খাদ্যদ্রব্যের বাইরেও বিভিন্ন জিনিসের দাম কমে আসবে। ডলারের দামও কমে আসবে। মূল্যস্ফীতি এখন মাত্র ৭ শতাংশ। ইউরোপজুড়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিরাজ করছে। জানুয়ারিতে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.১ শতাংশ, এপ্রিলে তা ৭.৪ শতাংশ। জুলাইতে এটি ৮.৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সে সব দেশে খাদ্যসহ কাঁচামালের দাম বেড়েছে। আর আমরা তো ওদের থেকেই কিনি। এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে ভীষণ ক্রাইসিস হয়েছিল, সে সময় মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। এখন আমাদের সবসময় রিজার্ভ মেইনটেইন করতে হয়। যদি একটু বাড়ে-কমে, তাহলে সমস্যা নেই। ৩ মাসের থাকা উচিত, এটি আইএমএফের চাহিদা। সে সময় আমাদের ছিল মাসে গড়ে ৭৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। ৩ মাসে দরকার ছিল ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। সে সময় সেটি কিন্তু ছিল। সে সময় এটি কমার কারণে সরকারকে ৫৬ আইটেমের এলসি মার্জিন বাড়ানো হয়েছিল, সেটা সব দেশই করে।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img