খুশির ঈদযাত্রায় বাড়ি ফেরার নির্মল আনন্দ

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি অনেকটাই কম। সরকারি ছুটির পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মহাসড়কগুলোতে যানজটের তীব্রতা ছিল না। তবে শনিবার ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে যেতে মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট ছিল। এদিন সন্ধ্যার পর গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় যানজট বাড়তে থাকে। এজন্য ওই সময় যাত্রীদের বাসের দেখা পেতে অপেক্ষার ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম দুই প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরিতে পার হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ সময় ছিল এক থেকে তিন ঘণ্টা। তবে বেশিরভাগ ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেছে। অবশ্য মাঝপথের স্টেশনে বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েন আগাম টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা।

এদিকে ঢাকা নদীবন্দরে সারাদিন ছিল অনেকটাই ফাঁকা। সন্ধ্যা গড়াতেই লঞ্চে ভিড় বাড়তে থাকে। কালবৈশাখী ঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে ছাদে যাত্রী নিয়েই ছেড়ে যায় বেশিরভাগ লঞ্চ। সন্ধ্যার পর ঝড়ের সংকেত জারির পর শিমুলিয়া-বাংলাবাজারসহ কয়েকটি রুটের ছোট লঞ্চ কিছু সময়ের জন্য চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ে বিপুলসংখ্যক যাত্রী আটকা পড়েন। সরেজমিন রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।

এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিতে কাটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার দেশের সড়ক ও মহাসড়কের অবস্থা ভালো। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিতেই কাটবে।’ রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ আশা প্রকাশ করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগে গাজীপুরের যে জায়গাটায় যানজট ছিল, এখন সেখানেও গাড়ি চলাচল করছে। ফলে স্বস্তিতেই ঘরমুখো মানুষদের ঈদযাত্রা কাটবে।’ অতিরিক্ত ভাড়ার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কারণে শুক্রবার চারটি কাউন্টারকে জরিমানা করা হয়েছে। বাস টার্মিনালগুলোতে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। যাত্রীদের অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

এদিকে পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এবার ঈদে সাত কারণে ভোগান্তি অনেকটা কম হয়েছে। যেমন- ঈদে দীর্ঘ ছুটি, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, সড়ক সংস্কার ও সেতু খুলে দেওয়া, মহাসড়কগুলোতে ইউটার্ন কমিয়ে দেওয়া, লঞ্চের সংখ্যা ও ট্রিপ বৃদ্ধি এবং ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় এড়ানো। তারা জানান, সড়ক-মহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আগের চেয়ে বেশি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যা যুগান্তরকে বলেন, সড়কপথে যাত্রী অনেক কমে গেছে। যাত্রীর অভাবে টার্মিনালে বাস রেখে দেওয়া আছে। অনেক যাত্রী বিকল্প পথে গন্তব্যে চলে গেছেন। তিনি বলেন, এবারের ব্যবস্থাপনা ভালো, সড়কেও গাড়ি কম। এসব কারণে ভোগান্তি কম হয়েছে।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, এবার বিপুলসংখ্যক মানুষ বিকল্প যানবাহন- মোটরসাইকেল, ট্রাক ও মিনিট্রাক এবং ভাড়া করা গাড়িতে বাড়ি গেছেন। মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বেড়ে যাওয়ায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ফেরিতে গাড়ি পার করতে হিমশিম খেতে হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তাদের। এ কারণে শিমুলিয়ার এক নম্বর ফেরিঘাটটি শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। বাকি তিনটি ঘাটে অন্যান্য গাড়ি পার হয়েছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধু সেতুতে একাধিক কাউন্টারে শুধু মোটরসাইকেলের টোল আদায় করা হয়।

পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, বিকল্প উপায়ে বিপুলসংখ্যক যাত্রী চলে যাওয়া বাস ও লঞ্চে তুলনামূলক যাত্রী কম ছিল। এ কারণে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট অনেকটাই ফাঁকা ছিল। যদিও গার্মেন্ট ছুটির পর বিকালে এসব টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত এ ভিড় অব্যাহত ছিল। এছাড়া অনেক বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এ অভিযোগে গাবতলীতে বেশ কয়েকটি বাসকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছাদে যাত্রী বহন করায় সদরঘাটে চারটি লঞ্চকেও জরিমানা করা হয়।

সরেজমিন গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় খুব একটা নেই। তবে মিরপুর বেড়িবাঁধ, টেকনিক্যাল মোড়, গাবতলী, আমিনবাজার এলাকায় শত শত মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের বেশিরভাগই লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে গিয়েছেন। এছাড়া অনেক যাত্রী কম ভাড়ায় ট্রাকে চড়েও দূরপাল্লার জেলায় গেছেন। যদিও আমিনবাজার এলাকায় পুলিশ মাইকিং করে পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন এবং বাসের ছাদে যাত্রীদের না চড়তে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। তবে এ অনুরোধ তোয়াক্কা না করে অনেককেই এভাবে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। যদিও এভাবে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। আমিন বাজারে ট্রাক থামিয়ে রংপুরের পীরগঞ্জের যাত্রী ডাকছিলেন চালক আব্দুস সালাম। তিনি জানান, শনিবার ভোররাতে কাঁচাপণ্য নিয়ে মিরপুর আসেন তিনি। যাবার সময়ে পীরগঞ্জ পর্যন্ত ৫০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বাসে গেলে ৮০০ টাকার কমে যাওয়া যায় না। ট্রাকে ৩০০ টাকা কম ভাড়া হওয়ায় যাত্রীরাও যাচ্ছেন। এভাবে যাত্রী নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কী না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমারটা বড় ট্রাক। তিন টনের ট্রাকেও মানুষ যাচ্ছেন। বাসের চেয়ে ট্রাক বেশি নিরাপদ।’

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img