পাবনার বেড়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন (২২) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ভাই হত্যার বদলা নিতেই ৩ মাস মেয়ে সেজে প্রেমের অভিনয় করার পর বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে ইমরানকে হত্যা করা হয়।
ইমরান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামি আজাদুর রহমান ওরফে নবীন (২৪) এবং তার বন্ধু আলাউদ্দিন (২০) আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এ তথ্য দেয়।
বেড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমরানকে গত ২৬ মার্চ রাতে হত্যা করা হয় এবং পরদিন ২৭ মার্চ সকালে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরানগর মহল্লার একটি খেত থেকে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ইমরান সাঁথিয়ার করমজা গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। ইমরান হত্যা মামলায় গ্রেফতার আজাদুর রহমান নবীন বেড়া সান্যালপাড়ার আব্দুল মাজেদ এর ছেলে এবং আলাউদ্দিন একই এলাকার মালপক মোল্লার ছেলে।
পাবনার পুলিশ সুপার বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, নবীনের ভাই শিশু আরাফাত (৮) হত্যার বদলা নিতে নবীন তার বন্ধু আলাউদ্দিনের সহায়তায় ইমরানকে হত্যা করেন। এ জন্য নবীন তিন মাস ধরে মেয়ে সেজে মোবাইল ফোনে ইমরানের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেন। এরই একপর্যায়ে ২৬ মার্চ রাতে মেয়ে কণ্ঠে ইমরানকে বাড়ির বাইরে ডেকে এনে খুন করেন। এ ঘটনায় গ্রেফতার আজাদুর ও আলাউদ্দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
পুলিশ জানায়, নিহত ইমরান ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া মহল্লার আরাফাত নামের ওই শিশু অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশোর অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৫ বছর যশোর কিশোর সংশোধনাগারে কারাভোগের পর কয়েক মাস আগে মুক্তি পান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা আরও জানায়, মুক্তিলাভের পর ইমরান বেড়া সিএন্ডবি মোড়ে তার বাবার কাপড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহায়তা করতেন এবং তিনি নিজেও একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২৭ মার্চ সকালে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরানগর মহল্লার একটি খেত থেকে ইমরানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর আগে ২৬ মার্চ রাতে ইমরান বাড়ি থেকে বাইরে গিয়ে নিখোঁজ হন। ইমরানের লাশ উদ্ধারের পর তার বাবা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে বেড়া মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপরই পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুর ইসলাম খানের নির্দেশে পুলিশের একটি দল ইমরান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় অভিযান চালিয়ে শিশু আরাফাতের ভাই আজাদুর রহমান নবীন ও তার বন্ধু আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই আসামিকে আদালতে পাঠানো হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শিশু আরাফাত হত্যার বদলা নিতে ইমরানকে খুন করা হয় বলে দুই আসামি স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতার আজাদুর ও আলাউদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ইমরানসহ তিনজন মিলে শিশু আরাফাতকে অপহরণের পর হত্যা করেন। এ ঘটনায় ইমরান সাড়ে ৫ বছর কারাভোগের পর কয়েক মাস আগে বের হন। বের হওয়ার পর তিনি আরাফাতের ভাই আজাদুরকে ‘কী করতে পারলি’ বলে তির্যক মন্তব্য করেন। এতে আজাদুরের মধ্যে ভাই হত্যার বদলা নেওয়ার ইচ্ছা জাগে। তিনি ইমরানের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মেয়ে সেজে তিন মাস প্রেমের অভিনয় করেন। পরে বন্ধু আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ইমরানকে খুনের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য দুজনে দুটি ছুরিও কেনেন।
তারা জানান, পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেয়ে কণ্ঠে ইমরানকে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরানগর মহল্লার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলেন আজাদুর। সেখানে পৌঁছানোর পর আজাদুর ও আলাউদ্দিন এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ইমরানকে হত্যা করেন।
বেড়া মডেল থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, ইমরান হত্যা মামলায় আসামি আজাদুর ও আলাউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভাই হত্যার বদলা নিতে গিয়ে আরেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।