দেশে বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার। এতে পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের পর যেখানে সেখানে ফেলে রাখায় দূসণ বাড়ছে। পর্যটন শহর হিসেবে রাঙামাটিতে এ প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার আরও বেশি। সচেতনতার অভাবে মানুষ যত্রতত্র এসব পণ্য ফেলায় কাপ্তাই লেকের পানি দূষিত হচ্ছে, মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা। তবে এসব বর্জ্যকে পুনঃউৎপাদনের কাঁচামাল তৈরিতে রাঙামাটিতে কাজ করছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এতদিন পথেঘাটে পড়ে থেকে পরিবেশ নষ্ট করতো, সেই প্লাস্টিকই এখন মূল্যবান হয়ে উঠেছে। এসব কারখানায় সংগ্রহ করা প্লাস্টিক থেকে সপ্তাহে গুঁড়া তৈরি হয় পাঁচ টনের মতো। তাতে বছরে আয় কোটি টাকার উপরে। আর প্লাস্টিক তৈরির উৎপাদিত কাঁচামাল এখন যাচ্ছে বিদেশে।
কারখানা দুটি থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ টন প্লাস্টিক গুঁড়া জেলার বাইরে পাঠানো হয়, আর কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ৫০ জন শ্রমিক। এসব কারখানা একদিকে যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিকের বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশ রক্ষা করছে, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানও। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে বৃহৎ পরিসরে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
দুটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শ্রমিক মো. হেলাল উদ্দিন ও মো. সমশু বলেন জানান, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বোতল সংগ্রহ করে ভাঙারিরা দোকানে নিয়ে আসে। প্রক্রিয়াজাত করার লক্ষ্যে সেখান থেকে ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হয় কারখানায়। কারখানায় নেওয়ার পর বোতল ও অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য আলাদা করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটে শ্রমিকদের। এরপর বোতলের লেভেল ছেড়া, রঙ অনুযায়ী পৃথক করা হয়। বাছাইকৃত বোতলগুলো প্রথমে কাটিং মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট টুকরো করা হয়। পরে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য মেশিনের মাধ্যমে মেশানো হয় মেডিসিন। অতপর চৌবাচ্চায় ফেলে ধুয়ে প্লান্টের বাইরে রোদে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করা হয়।
আরেক শ্রমিক ফাতেমা বলেন, বাড়ির কাছে প্লাস্টিকের কারখানা থাকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যে অর্থ পাই তা পরিবারের কাজে লাগে। তবে মাঝে মাঝে বোতল সংকটে কাজ বন্ধ থাকে। তখন কষ্ট হয়ে যায়।
রাঙামাটি মেসার্স এস বি প্লাস্টিকের সুব্রত বড়ুয়া বলেন, প্যাকেটজাত রঙিন প্লাস্টিক টুকরোগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কারখানায়। আর সাদা বোতলের টুকরো চট্টগ্রামে এজেন্টের হাত হয়ে চলে যায় চীনে। প্লাস্টিকের এই বোতলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রাঙামাটির মেসার্স রাঙামাটি প্লাস্টিকের রাজা মিয়া বলেন, পুঁজির অভাবে আমরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না। উৎপাদিত কাঁচামাল বিদেশে গেলেও পরিবেশবান্ধব এই কাজে ঋণ সুবিধা পাওয়া যায় না। ঋণ সুবিধা পাওয়া গেলে আরও অনেক বেশি প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করা যেতো, বাড়তো উৎপাদন।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি, আব্দুল ওয়াদুদ ব্যাংকগুলো বিনিয়োগবান্ধব নয় অভিযোগ করে বলেন, এই ক্ষেত্রে ব্যাংগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। রিসাইক্লিংয়ের কাজে জড়িত কোনও ইন্ডাস্ট্রির জন্য ব্যাংক ঋণ দেয় না। এই ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে উদার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ইউআর/