বিমানের ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা-টরন্টো রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সরাসরি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর চেষ্টা পাঁচ বছর ধরেই চলছিল। এ ফ্লাইট চালু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও দীর্ঘদিনের। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নানান উদ্যোগ নিলেও বিমান কর্তৃপক্ষের অদক্ষতায় এতদিন এ রুটে চলেনি বিমানের ফ্লাইট। অবশেষে জুনে তা চালু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেই ঢাকা থেকে টরন্টো যাবে বিমানের একটি ফ্লাইট। বিমান ঘোষণা দিয়েছে— এটি পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট। এতে বিমান প্রতিমন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, মন্ত্রণালয় ও বিমানের কর্মকর্তারা যাবেন। নথিপত্র বলছে, বিশাল বহর নিয়ে তারা যাচ্ছেন কানাডার বিমানের অফিস, জিএসএ নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখা এবং টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে দেশেটির সঙ্গে আলোচনা করতে। তাই ফ্লাইট চালুর আগেই জন্ম হয়েছে বিতর্কের।

২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। তখন মন্ত্রী ছিলেন রাশেদ খান মেনন। বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, কানাডার সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগের দিগন্ত প্রসারিত হতে যাচ্ছে। হয়েছে এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট। ২০২০ সালের দিকে এসে ঢাকা-কানাডা ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়ার গতিও বাড়ে।

২০২০ সালের জুলাইতে বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছিলেন, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ঢাকা-টরেন্টো রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, মার্চে টরন্টো, টোকিও ও চেন্নাই রুটে বিমানের ফ্লাইট শুরু হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইটের ব্যাপারেও দ্রুত সুখবর দিতে পারবো। যদিও পরে সেই সুখবর আসেনি।

সূত্র জানায়, জাতিসংঘের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ব্যবসায়ীক কারণে ঢাকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতো। ১৯৯৬ সালে ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ রাখে বিমান। তবে বাংলাদেশের বিমানবন্দরকে ক্যাটাগরি-২ উল্লেখ করে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ফের ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিরা এ রুটে ফ্লাইট চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীও নিউইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট চালুর নির্দেশনা দেন। সেইসঙ্গে বিকল্প হিসেবে কানাডার সঙ্গে ফ্লাইট চালুরও নির্দেশনা দেনে তিনি। দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সফলতা দেখাতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও বিমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস ও মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ২৬ মার্চ ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জুনের আগে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরুর সম্ভাবনা নেই। বিমানের আরও অনেক রুটে ফ্লাইট উদ্বোধন হয়েছে। মন্ত্রীসহ অনেকেই উদ্বোধনী ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছেন। যারা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের এভিয়েশন নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই। ২/১ বছরের জন্য আসেন, আবার চলে যান। তাদের মূল টার্গেট থাকে বিমানের উন্নতির চেয়ে নিজেদের পদন্নোতি।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একটা রুট চালুর আগে অনেক কাজ হয়। অনেক অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ল্যান্ডিং অনুমতি, ওভারফ্লায়িং অনুমতি, কমার্সিয়াল লাইসেন্স, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, ফুয়েল পারমিশন করতে হয়। এছাড়া যে দেশে যাবে সেখানে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জিএসএ নিয়োগ করতে হয়। প্রয়োজনে টেস্ট ফ্লাইটও হতে পারে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে চালুর আগ পর্যন্ত এসব নিয়ে মাতামাতির ঘটনা অন্য কোনও এয়ারলাইনে কোনোদিন ঘটেনি।’

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে যতটা প্রয়োজন বিমানকে সহায়তা করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী বিমান ফ্লাইট শুরু করতে পারবে।’

২৬ মার্চের ফ্লাইটে মন্ত্রণালয় থেকে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ মোছাব্বির হোসেন ওজ নসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ যাবেন। একই ফ্লাইটে প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন তার স্ত্রী শামীমা জাফরীন, কন্যা তাহরিমা রাহবার। তারা তাদের নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করবেন বলে বলা হচ্ছে।

বিমান থেকে যাচ্ছেন প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক এয়ার কমডোর মৃধা মো. একরামুজ্জামান, প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ড. মো. মোকতার হোসেন। এছাড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং বিমানের আরও কর্মকর্তাসহ ৩০ জন ওই ফ্লাইটে যাবেন।

ঢাকা-টরন্টো রুটে নিয়মিত ফ্লাইট কবে থেকে শুরু হবে, ভাড়া কত টাকা, সপ্তাহে কয়টি ফ্লাইট চলবে, জিএসএ হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে— এসব জানতে গত এক সপ্তাহ যোগযোগ করেও বিমানর পক্ষ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত আমাদের ফ্লাইট শুরুর কথা ছিল মার্চে। আমরা আশা করছিলাম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ২৬ মার্চ থেকেই শুরু করতে পারবো। কিন্তু কানাডার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ হতে জুনের ১২ তারিখ পর্যন্ত সময় লাগবে। এজন্য সিদ্ধান্ত হয় ২৬ মার্চেই টেস্ট ফ্লাইট পাঠাবো।

বিমানের আরেক কর্মকর্তা বলেন, “এর আগে শারজাহ, ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট চালু করলাম। তখন কি শুনেছেন মন্ত্রীসহ একটি বহর ‘পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট’ উদ্বোধন করছেন? বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালুর আগে বিমান, সিভিল অ্যাভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া আর কারও কোনও কাজ নেই। বাণিজ্যিকভাবে যখন উদ্বোধন হবে, তখন জাঁকজমক আয়োজন হতে পারে।”

১৯ মার্চ বিমানের জনসংযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে কানাডার টরন্টো রুটে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করছে বিমান। যাত্রীরা এ রুটের টিকেট কিনতে পারবেন। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩০৫ টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে টরন্টোতে অবতরণ করার কথা রয়েছে ওই ফ্লাইটের। ২৯ মার্চ টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট বিজি-৩০৬ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং ৩০ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় অবতরণ করবে। বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে এ ফ্লাইট পরিচালিত হবে।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img