রুশ বিমান বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ইউক্রেন

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রায় এক মাস হতে চললো। এই সময়ে সবচেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা হলো ইউক্রেনের বিমানবাহিনীকে এখনও পরাজিত করতে পারেনি রাশিয়া। সামরিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করেছিলেন, রুশ সেনাবাহিনীর দ্রুতই ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সামরিক উড়োজাহাজ ধ্বংস বা অচল করে দেবে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত তা ঘটেনি। এর বদলে টপ গান স্টাইলে মাঝআকাশে যুদ্ধবিমান লড়ছে। আধুনিক যুদ্ধে বিরল হলেও ইউক্রেনের আকাশে এখন এমন ঘটনা ঘটছে।

ইউক্রেনীয় পাইলটদের সফলতা স্থলে থাকা সেনাদের সুরক্ষিত থাকতে সহযোগিতা করছে। একই সঙ্গে শহরে বড় ধরনের বোমাবর্ষণও ঠেকাচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমানের পাইলটরা কয়েকটি রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাদের সেনাবাহিনীর রাশিয়ার ৯৭টি উড়োজাহাজ ধ্বংস করেছে। এই সংখ্যার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম। কিন্তু নদী, ক্ষেত ও বাড়তে রুশ যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথা তারা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী চরম গোপনীয়তা বজায় রেখে লড়াই করছে। কখনও পশ্চিম ইউক্রেনের বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করছে যুদ্ধবিমান। যে বিমানবন্দরে রাশিয়া বোমাবর্ষণ করেছে। কিন্তু এখনও টেকঅফ বা অবতরণের জন্য পর্যাপ্ত রানওয়ে রয়ে গেছে। আবার কখনও হাইওয়ে থেকেও উড্ডয়ন করছে ইউক্রেনীয় বিমান। তাদের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা রাশিয়ার তুলনায় অনেক কম। ধারণা করা হয়, রাশিয়া যেখানে প্রতিদিন দুইশ’র মতো যুদ্ধবিমান উড়াচ্ছে সেখানে ইউক্রেনের সংখ্যা হতে পারে মাত্র দশটি।

ইউক্রেনের পাইলটদের একটি সুবিধা রয়েছে। দেশের বেশিরভাগ ভূখণ্ডে রুশ যুদ্ধবিমানকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত আকাশে উড়তে হচ্ছে। ফলে তারা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত স্থানান্তর করে গুলি করে রুশ বিমান ভূপাতিত করতে পারছে।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত বলেন, আকাশে ইউক্রেন কার্যকর রয়েছে কারণ নিজেদের ভূখণ্ডে কাজ করছি। শত্রুদের আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় উড়তে হচ্ছে। এর ফলে শত্রু বিমানকে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁদে ফেলা সম্ভব হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স একাডেমির সিনিয়র স্কলায় ও ইরাকে ডেজার্ট স্টর্ম বিমান হামলার আক্রমণ পরিকল্পনাকারী ডেভ ডেপটুলা জানান, ইউক্রেনের পাইলটদের অসাধারণ দক্ষতা সংখ্যা কম থাকার সীমাবদ্ধতা পুষিয়ে নিয়েছে। ইউক্রেনের এখন প্রায় ৫৫টি যুদ্ধ বিমান রয়েছে। গুলিবিদ্ধ ও কারিগরি ব্যর্থতার কারণে এই সংখ্যা নিয়মিত কমছে। কারণ ইউক্রেনের পাইলটরা এগুলোর কাছ থেকে সর্বোচ্চ সক্ষমতা আদায়ের চেষ্টা করছেন।

ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার পশ্চিমা সরকারগুলোর কাছে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী ও ন্যাটোকে ইউক্রেনকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত এই দুই পদক্ষেপ নেননি পশ্চিমা নেতারা। স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ড মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো সহজেই চালাতে পারবে ইউক্রেনীয় পাইলটরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও যুদ্ধবিমান পায়নি ইউক্রেন।

ডেপটুলা জানান, এসব যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে পাঠানো সংকটজনক। পুনঃসরবরাহ ছাড়া পাইলটের ঘাটতির আগেই যুদ্ধবিমানের ঘাটতি দেখা দেবে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারে পাইলটবিহীন ড্রোনও রয়েছে। কিন্তু এগুলো আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণে লড়াই ব্যবহার করা যায় না। তুরস্কের নির্মিত বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোন রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইউক্রেন। এটি ট্যাংক বা কামানের অবস্থানে আঘাত হানতে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আকাশে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে না। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ বা অচল হয়ে গেলে রাশিয়া সহজেই এগুলোকে ভূপাতিত করতে পারবে।

বিমানবাহিনীর এই সফলতায় দেশটির স্বেচ্ছাসেবকদেরও ভূমিকা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের একটি নেটওয়ার্ক রুশ যুদ্ধবিমানের গতিবিধিতে নজর রাখে, অবস্থান এবং সম্ভাব্য গতি ও উচ্চতা তারা জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউক্রেনের বেসরকারি বিমানের পাইলটরা বেসামরিক বিমানে নেভিগেশন সরঞ্জাম খুলে বিমানবাহিনীকে দিয়েছে।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img