প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সোমবার। উৎপাদন আগেই শুরু হলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে দক্ষিণ বঙ্গে পাওয়ার হাব করতে চায় সরকার। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহের কারণেই করোনার দুই বছর পর সশরীরে কোনও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তিনি।

সোমবার (২১ মার্চ) সকালে তিনি কলাপাড়ার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসবেন। পাশাপাশি তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পুরো পটুয়াখালী জেলার বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-বিসিপিসিএল’র। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডাব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্বের দশম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এটি নির্মাণ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পায়রায় বিসিপিসিএল ১৩২০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি করে ইউনিট রয়েছে। ২০২০ সালের জুন নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসে। একই বছরের আগস্টে উৎপাদনে আসে দ্বিতীয় ইউনিট। তবে সঞ্চালন লাইন তৈরি না হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পুরো সক্ষমতাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র   
পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র
বিসিপিসিএল’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ এম খোরশেদুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাওয়ার প্ল্যান্টের এই জায়গাটি প্রধানমন্ত্রী নিজে পছন্দ করেছেন। উনি যখন পায়রা বন্দর উদ্বোধন করেন, সেদিন থেকেই উনার একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল— এই জায়গাটি নদী বেষ্টিত, কয়লা আনার জন্য নদীপথ ব্যবহার করা যাবে। যেহেতু নদীপথ সমুদ্রের কাছাকাছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সুষম উন্নয়ন চেয়েছিলেন। সুষম উন্নয়ন করতে গেলে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকার উন্নয়ন প্রয়োজন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চেয়েছিলেন। তার সুষম উন্নয়নের পরিকল্পনার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।’

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বিসিপিসিএল। এই কেন্দ্রের নির্মাণকাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

খোরশেদুল আলম বলেন, ‘২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আমরা চালু করতে পারবো বলে আশা করছি। এখনও পর্যন্ত ২২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ছিল— দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের একটি অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে ওই অঞ্চলের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এর আগে দক্ষিণাঞ্চল অবহেলিত ছিল।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার একদশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। যৌথ উদ্যোগের এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। ১০ বছরের চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে এই কয়লা আমদানি করা হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়েছে। করোনার বাস্তবতার কারণে এটা এখন উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন, যার কারণে তিনি করোনার মাঝে এই প্রথম আসছেন ঢাকার বাইরে।’

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img