ওয়ান্ডারার্সে অচেনা এক বাংলাদেশেরই দেখা মিলেছে। প্রথম ওয়ানডে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস গড়তে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ছিল না তার ছিটেফোঁটাও! বরং ক্যান্সার সচেতনতার স্মারক হিসেবে ‘পিংক ওয়ানডে’র অতীত ঐতিহ্যই ধরে রাখলো স্বাগতিক দল। বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে তৃতীয় ওয়ানডেটি হয়ে রইলো সিরিজ নির্ধারণী। ৩ উইকেট হারিয়ে প্রোটিয়ারা ম্যাচ জিতে নিয়েছে ৩৭.২ ওভারেই।
পিংক ওয়ানডেতে কখনোই হারের নজির নেই স্বাগতিকদের। তার ওপর ১৯৫ রানের লক্ষ্যটা ছিল মামুলী। ফলে দুই ওপেনার জানেমান মালান ও ডি কক শুরুটা করেন দেখেশুনে। এক পর্যায়ে কুইন্টন ডি কক-ই ঝড়ো গতিতে ব্যাট চালিয়েছেন। ঝড় তুলে ২৬ বলে তুলে নেন ফিফটিও। মিরাজ দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা এই ওপেনিং জুটি ভাঙলেও ততক্ষণে নির্ধারণ হয়ে গেছে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি। এই জুটিতেই যোগ হয় ৮৬টি রান। ১৩তম ওভারে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে ২৬ রানে বোল্ড হয়েছেন মালান।
মিরাজের ১১তম ওভারের শেষ বলে ডি ককেরও ক্যাচ উঠেছিল। মুশফিকুর রহিম গ্লাভসে জমাতে পারেননি তার ক্যাচ। একই ওভারে নষ্ট হয়েছে দ্বিতীয় রিভিউ। পরে অবশ্য ১৬তম ওভারে আর শেষ রক্ষা হয়নি প্রোটিয়া ওপেনারের। সাকিব আল হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। অবশ্য বাউন্ডারি লাইনে আফিফের অসাধারণ ফিল্ডিংয়েই ক্যাচ আউট হয়েছেন ডি কক। ফেরার আগে ৪১ বলে করেছেন ৬২ রান। তার ইনিংসে ছিল ৯টি চার ও ২টি ছয়।
এই সময়ে আর প্রোটিয়াদের চেপে ধরার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং এর পর ম্যাচটা নিজেদের হাতের মুঠোয় নিতে অবদান রাখেন তেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরিয়েনে। ৮২ রান যোগ করেন তারা। জয়ের কাছে থাকার মতো অবস্থায় বাভুমাকে ৩৭ রানে তালুবন্দি করিয়েছেন আফিফ। তাতেও ম্যাচ পরিস্থিতির কোনও হেরফের হয়নি। কাইল ভেরিয়েনে ও রাসি ফন ডার ডুসেন মিলেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলেছেন। ৩৭.২ ওভারে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন ডুসেন। হাফসেঞ্চুরি তুলে ভেরিয়েনে ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ৮৬ বলের দায়িত্বশীল ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়।
বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন মিরাজ, সাকিব ও আফিফ।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়া পেস ঝড়ে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে টপ অর্ডার। পরে মিডল অর্ডারে আলো ছড়িয়ে আফিফ হোসেন লড়ে গেছেন। ওয়ান্ডারার্সে তার হাফসেঞ্চুরিতে ভর করেই নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান।
৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দলকে টেনে তোলার চেষ্টায় নামেন আফিফ- মাহমুদউল্লাহ। চমৎকার ব্যাটিংয়ে চাপ কাটিয়ে আশা দেখাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ জুটিটা আর টেনে নিতে পারলেন না। তাবরেজ শামসির ঘূর্ণিতে লেগ স্লিপে ধরা পড়েন জানেমান মালানের হাতে। তার বিদায়ে শেষ হয় আফিফের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি।
পরে আফিফ-মিরাজই দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের শাসন করে দলকে একটা অবস্থানে নিয়ে গেছেন। আফিফ তো সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। পরে ৭২ রানে আউট হয়ে গেছেন তিনি। তার বিদায়ের পরপর বিদায় নেন সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজও। আলো ছড়িয়েছেন এই ব্যাটারও। খেলেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস। আফিফ-মিরাজ সপ্তম উইকেটে গড়েন রেকর্ড ৮৬ রানের জুটি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ।
আফিফ দারুণ সব শটে ও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। তার ৭২ রানের ইনিংসটি ছিল ১০৯ বলে সাজানো। ছিল ৯ বাউন্ডারি।
দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সফল বোলার রাবাদা। এই ডানহাতি পেসার ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে পেয়েছেন ৫ উইকেট। ম্যাচসেরাও হন তিনি। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন লুঙ্গি এনগিদি, ওয়েইন পারনেল, তাবরেজ শামসি ও রাসি ফন ডের ডুসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৯৪/৯ (আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২৫, লিটন ১৫, মুশফিক ১১; রাবাদা ৫/৩৯, পারনেল ১/৬, শামসি ১/২৬, ফন ডার ডুসেন ১/৩)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭.২ ওভারে ১৯৫/৩ (ডি কক ৬২, কাইল ভেরিয়েনে ৫৮*, বাভুমা ৩৭; মিরাজ ৫৬/১, সাকিব ১/৩৩, আফিফ ১/১৫)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী।
ইউআর/