করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়াতে পারে, এ কথা আগেই বলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, হাঁচি-কাশির চেয়েও কথা বলার সময় করোনা আরও বেশি ছড়ায়। চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষণার সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা আগে দাবি করেছিলেন, মানুষের নাক ও মুখ থেকে বেরোনো জলকণা বা ড্রপলেটে ভাইরাল স্ট্রেইন মিশে থাকতে পারে। এই ড্রপলেট যখন বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন জলীয় বাষ্পে ভরাট হয়ে আরও বড় জলকণা তৈরি করে। একে এয়ার ড্রপলেট বলে। এই ড্রপলেটে বাতাসে ভেসে ভাইরাল স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ল্যানসেটের গবেষকরা বলছেন, প্রথমত তবে বড় বড় জলকণা বা ড্রপলেটে ভেসে বেশিক্ষণ বাতাসে টিকে থাকা সম্ভব নয়। কারণ মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে যে কোনো ভারী জিনিস বেশিক্ষণ ভাসতে পারে না। তাই হাঁচি বা কাশির কারণে যে বড় ড্রপলেট তৈরি হয় তাতে ভেসে ভাইরাস বহুদূরে ছড়িয়ে পড়বে—এমনটা ভাবা ভুল।
তবে কি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না? ল্যানসেটের প্রতিবেদন বলছে, সেটাও ছড়ায়, তবে বেশি দূরত্বে নয়।
দ্বিতীয়ত, তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে ভাইরাস এত দূর ভেসে যাচ্ছে কীভাবে? তার উত্তরে গবেষকরা বলছেন, বাতাসের ছোট ছোট কণার ব্যস পাঁচ মাইক্রোমিটারের বেশি নয়। তাই এই কণায় ভেসে অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়া সম্ভব। আরও সহজ করে বললে, ধরুন আপনি আক্রান্ত রোগীর থেকে ছয় ফুটেরও বেশি দূরত্বে রয়েছেন, তাহলেও ভাইরাসের কণা হাওয়ায় ভেসে আপনার নাক বা মুখ দিয়ে ঢুকে পড়তে পারে। ঠিক যেমন বাতাসে ভাসমান দূষিত কণাগুলো প্রতিদিন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে আমাদের শরীরে ঢোকে, এই ব্যাপারটাও তেমনই। তাই বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ফেস-মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, ভিড়ের মধ্যে গেলে ফেস-শিল্ড বা ফেস-কভার থাকলে খুবই ভালো হয়। পাশাপাশি পারস্পরিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দিতে হবে।
গবেষকরা বলছেন, উপসর্গহীন রোগীদের তো হাঁচি-কাশির লক্ষণ দেখা যায় না, তাহলে তাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কীভাবে? তার কারণই হলো এই অ্যারোসল। উপসর্গহীন রোগীদের থেকে ৩৩ থেকে ৫৯ শতাংশ সংক্রমণ বেশি ছড়াতে পারে। রোগীর হাঁচি-কাশিতে যতটা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তার চেয়েও বেশি ছড়াতে পারে কথা বলা, চিৎকার করা, গান গাওয়া ইত্যাদি থেকে।
সূত্র : দ্য ওয়াল