দেশে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজের স্লিপ নিতেও গ্রাহকদের হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার। লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরও মিলছেনা দ্বিতীয় ডোজের তারিখ। পাওয়া যাচ্ছে না বা সার্ভারে সমস্যা এমন খোঁড়া যুক্তি দেখানো হচ্ছে গ্রাহকদের।
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় বক্ষ ব্যধি হাসপাতালে দেখা গেছে এই চিত্র। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাহিদা সীমা দিনেরখবরকে জানান, তিনি প্রতিদিন উত্তরা থেকে বনানীতে তার কর্মস্থলে আসেন। গত বৃহষ্পতিবার তিনি এই হাসপাতালে এসে টিকা নিয়েছেন। তখনই তার টিকার স্লিপে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় ডোজের স্লিপ সংগ্রহের তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু আজ এসে প্রায় দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে আজ দেওয়া হবে না।
এত সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর এই কথা কেন? এমন প্রশ্নে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন যারা নির্দিষ্ট তারিখের আগেই চলে এসেছেন তাদের আজ স্লিপ দেওয়া হবে না। তখন তিনি তার মোবাইলে আসা এসএমএস দেখান তাদের। তখন তাকে বলা হয়ে আজ তাদের সার্ভার ডাউন। টানা দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর কতৃপক্ষের এমন কথায় বেশ বিরক্ত হয়েছেন ওই নারী। তিনি বলেন, দেখেন আমরাতো বেসরকারী চাকরী করি। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এখানে এসেছি। এখন তারা বলছে সামনের সপ্তাহে আসতে। রোজ রোজ তো অফিস আমাদের এমন ছুটি দিবে না।
শুধু নাহিদা সীমাই নন। আরও এক দম্পতিকেও দেখা গেল এমন হয়রানির শিকার। ওই দম্পতির অভিযোগ, তারা স্বামী-স্ত্রী একসাথেই টিকা নিয়েছেন, এবং আজই ছিল তাদের দ্বিতীয় ডোজের স্লিপ সংগ্রহের তারিখ। কিন্তু স্বামীর স্লিপ আসলেও স্ত্রীর টা আসেনি। তাদেরও একই সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, সার্ভার ডাউন। ওই দম্পতির অভিযোগ, আসলে সার্ভারের কোন সমস্যা নয়, হাসপাতাল কতৃপক্ষ আসলে দুপুরের পর আর কাজ করতে চান না।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
দাবি করা হচ্ছে অনৈতিক অর্থের
বাংলাদেশে যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত ১৩ লাখের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেই ৷ তাদের জন্য এখন দ্বিতীয় ডোজের টিকা সংগ্রহই বড় চ্যালেঞ্জ। তার উপর উঠেছে অনৈতিক অর্থ দাবি করার অভিযোগ। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে গত বুধবার করোনার প্রথম ডোজের টিকা নেন এক ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি দিনেরখবরকে বলেন, ব্যবসার জন্য প্রায় আমার দেশের বাইরে যেতে হয়। টিকা নেওয়া ছাড়া বর্তমানে দেশের বাইরে যাওয়া যায় না। তাই তিনি রেজিষ্ট্রেশন করেছিলেন অনলাইনে। কিন্তু পনের দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও কোন সাড়া না পাওয়ায় তিনি মুঠো ফোনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পর তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা দাবি করা হয়। বলা হয়, দুই হাজার টাকা দিলে তাড়াতাড়ি টিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। দেশের বাইরে ব্যবসায়িক কাজ থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই টিকা নিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, সারা দেশে গত ৭ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া গণটিকা দান ক্যাম্পেইনে ২৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।