দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে আগামী বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে সব ধরনের অফিস ও কলকারখানা খোলার অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রোববার (৮ আগস্ট) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, শপিংমল ও বাজার সকাল ১০টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধি-নিষেধের অনুবৃত্তিক্রমে কিছু শর্ত সংযুক্ত করে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলো।
শর্তগুলো হলো-
১. সকল সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক খোলা থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন/যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।
৪. শপিংমল/মার্কেট/দোকানপাট সমূহ সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক খোলা রাখা যাবে।
৫. সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে।
৬. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ০৮.০০টা থেকে রাত ১০.০০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
৭. সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
৮. গণপরিবহন, বিভিন্ন দপ্তর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।
এর আগে দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ১০ আগস্টের পর চলমান বিধিনিষেধ একবারে তুলে নেওয়া হবে না। ধাপে ধাপে শিথিল করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিধিনিষেধে কোন কোন বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে সে বিষয়ে এক-দু’দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হবে। কর্মজীবীদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যক্সিনেশনের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে ৩ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, আগামী ১১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও মার্কেট খোলা হবে। সেই সঙ্গে সীমিত পরিসরে চলাচল করবে গণপরিবহনও।
লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আমরা আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়াচ্ছি। কারণ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আমরা এ ১০ তারিখ পর্যন্ত সুযোগ দিচ্ছি। আর ১১ তারিখ থেকে যাতে সব কিছু খুলতে পারে আমরা সেই সুযোগ রেখেছি।
এদিকে, সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনেই রেকর্ড ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০ জন টিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রেকর্ড ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ জনকে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৭৯৮ জন।
শনিবার (৭ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টিকাগ্রহীতাদের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৭ হাজার ৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ১৬ হাজার ২১৯ জন, নারী ১০ হাজার ৮৬০ জন।
আর ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪ হাজার ৬৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ পেয়েছেন ৪ হাজার ১৩৫ জন, নারী ৫৩৯ জন।
রোববার চীনের সিনোফার্মের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৭ জন। নারী ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৪ জন। সিনোফার্মের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২২ হাজার ৪৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ নেন ১২ হাজার ৮৮৩ জন, নারী ৯ হাজার ১৬২ জন।
মর্ডানা প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২১ জন। পুরুষ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ১৯ জন, নারী পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৭০২ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ কেউ পায়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’ জারি করে সরকার। সে মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধের’ মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।