আজ রোববার দিবাগত রাতে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও ইতালি। পারফরমেন্স বিবেচনায় যোগ্যতর দল হিসেবেই ফাইনালের টিকিট কেটেছে দল দুটি। এখন অপেক্ষা শেষ লক্ষ্য পূরণের।
যদিও স্বাগতিক হিসেবে কিছুটা হলেও পাল্লাটা ঝুলে আছে ইংল্যান্ডের দিকেই। ১৯৬৬ সালের পর বড় কোনও টুর্নামেন্টের শিরোপাও ঘরে তোলা হয়নি ইংল্যান্ডের। ৫৫ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে ওঠার স্মৃতিটাও স্মরণীয় করে রাখতে চায় ইংল্যান্ড।
গত বুধবার সেমিফাইনালে ৬৪ হাজার ৯৫০ জন দর্শকের উপস্থিতিতে ডেনমার্ককে অতিরিক্ত সময়ে ২-১ গোলে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। একই মাঠে ফাইনালের দ্বৈরথে উড়তে থাকা ইতালির মোকাবেলা করবে হ্যারি কেইন বাহিনী।
টুর্ণামেন্টের অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। যদিও ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশী ম্যাচ খেলার সুবিধাটা তারা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে। ডিফেন্ডার জন স্টোনস বলেছেন, ‘এটা সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি। ওয়েম্বলিতে ফাইনাল খেলা মানে এটি আরও বেশী স্পেশাল। টুর্ণামেন্টের শুরুতে এই স্বপ্নটাই আমরা দেখেছিলাম। আমরা এখন খুব বেশী চাপ নিচ্ছিনা, যেভাবে টুর্ণামেন্টে এগিয়ে গেছি সেটাই ধরে রাখতে চাই। গত কয়েক দিন বেশ কিছু কঠিন ম্যাচ আমাদের খেলতে হয়েছে।’
একইসঙ্গে মেজর কোন টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ইতালিকে পরাজিত করতে পারেনি ইংল্যান্ড। যদিও খুব বেশী একটা মুখোমুখি হবার সুযোগও ঘটেনি। ইউক্রেনে ২০১২ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুট আউটে জয়ী হয়েছিল ইতালি। এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইতালিই জিতেছিল ২-১ গোলে। যদিও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল দুটি দলই।
কিন্তু তারপর থেকেই যেন চেহারাই পাল্টে গেছে দুই দলের। তুরষ্ককে ৩-০ গোলে পরাজিত করার মধ্যদিয়ে আজ্জুরিরা ইউরো ২০২০ অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত কোচ রবার্তো মানচিনির অধীনে টানা ৩৩ ম্যাচে অপরাজিত থেকে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। মানচিনির খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে ইংল্যান্ডে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওয়েম্বলিতে এ নিয়ে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে ইতালি। এর আগে শেষ ১৬’তে অস্ট্রিয়াকে অতিরিক্ত সময়ে ২-১ গোলে ও স্পেনকে সেমিফাইনালে টাই ব্রেকারে পরাজিত করে ফাইনালের টিকিট পায় আজ্জুরিরা।
ইতালির অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার লিওনার্দো বনুচ্চি বলেছেন, ‘তাদের মাঠে খেলাটা আমাদের ভীত করছে না। আমরা জানি ফাইনালের দিন বেশীরভাগই থাকবে ইংলিশ সমর্থক। কিন্তু তারপরেও আমরা নিজেদের স্বাভাবিক ম্যাচ খেলার চেষ্টা করবো। আমরা ঐতিহাসিক কিছু করে দেখাতে চাই। আশা করছি ভাল কিছু করে দেখাতে পারবো।’
সেমিফাইনালে প্রায় ১১ হাজার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইতালিয়ান সমর্থক মাঠে উপস্থিত ছিল। ফাইনালে তাদের দেখা যাবে, এছাড়া ইতালি থেকে এক হাজার দর্শকের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ফাইনালে মাঠে উপস্থিত থাকবেন ইতালিয়ান প্রেসিডেন্ট সার্জি মাত্তারেলাও।
ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে ইতালিও দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটিয়ে শতভাগ সফল হয়েই ঘরে ফিরতে মুখিয়ে আছে। চারবারের বিশ্বকাপ বিজয়ীরা সর্বশেষ ১৯৬৮ সালে তাদের একমাত্র ইউরো শিরোপা হাতে তুলেছিল। এরপর থেকে তারা দুটি ফাইনালে উঠলে ২০০০ সালে ফ্রান্সের কাছে ও ২০১২ সালে স্পেনের কাছে পরাজিত হয়। রোববারের ম্যাচটি বড় কোনও আসরে তাদের ১০ম ফাইনাল।
২০১৮ সালে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ার পরেই মানচিনিকে ইতালির দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর থেকে মানচিনির অধীনে বদলে যেতে শুরু করে ইতালি।