এক-দুটি বছর নয়, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষাতেই তো ছিল আর্জেন্টিনা। অপেক্ষায় ছিল, জাতীয় দলের হয়ে সময়ের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির হাতে শিরোপা দেখার। অবশেষে সব অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে স্বপ্নের ট্রফি জিতল আর্জেন্টিনা।
আজ রোববার ঐতিহাসিক মারাকানায় বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় শুরু হওয়া কোপা আমেরিকার ফাইনালের ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলটি করেছেন ডি মারিয়া। ২০০৪ সালে সিজার দেলগাদোর পর প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে কোপার ফাইনালে গোল করলেন ডি মারিয়া।
মারাকানায় ম্যাচটিতে বল দখলে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। প্রথমার্ধের ৬০ ভাগ সময় বল দখলে রেখেছেন নেইমাররা। আক্রমণেও এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। পুরো ম্যাচে ১৩টি শট নিয়েছে ব্রাজিল, যার মধ্যে দুটি ছিল অনটার্গেটে যাওয়ার মতো। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার পাঁচ শটের মধ্যে লক্ষ্যে যাওয়ার মতো ছিল দুটি। তার মধ্যেই সফল লিওনেল স্কালোনির দল।
এদিন ম্যাচের শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখলেন ব্রাজিল তারকা ফ্রেড। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে মন্তিয়েলকে ফাউল করায় ফ্রেডকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। ম্যাচের শুরু থেকেই ফাউলে ভরপুর ছিল ম্যাচটি। পুরো ম্যাচে ২১ বার ফাউল করেছে ব্রাজিল, ১৯ বার ফাউল করেছে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় প্রথম সুযোগ পায় ব্রাজিল। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে নেইমারের দিকে বল বাড়িয়ে দেন রিচার্লিসন। তবে সফল হতে দেননি ওতামেন্দি।
পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের ২২ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে ডি মারিয়ার দিকে বল বাড়ান দি পল। সুযোগ হাতছাড়া করেননি পিএসজি তারকা। বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের কাছ থেকে বাঁ পায়ের দারুণ শটে ব্রাজিল গোলকিপার এডারসনের মাথার উপর দিয়ে দলকে লিড এনে দেন ডি মারিয়া।
৩২ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ মিস করে আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ছুটে যান মেসি। বলে শটও নেন। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যভেদ হয়নি। পোস্টের কাছ ঘেঁষে বল চলে যায় মাঠের বাইরে।
পরের মিনিটে নেইমারকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পেয়ে যায় ব্রাজিল। কিন্তু ফ্রিকের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি নেইমার। লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিলে সেই যাত্রায় গোলশূন্য থাকে তিতের শিষ্যরা।
৪২ মিনিটে আরেক দফায় সুযোগ পায় ব্রাজিল। কিন্তু সেবারও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি স্বাগতিকেরা। শেষ পর্যন্ত বিরতির আগে আর গোল না এলে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
বিরতির পর নিজেদের আরও গুছিয়ে নেয় ব্রাজিল। আক্রমণেও ধার বাড়ায় স্বাগতিকরা। ৪৮ মিনিটের মাথায় রিচার্লিসন আক্রমণে যান। তবে সফল হতে পারেননি। ৫১ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন অর্জেন্টিনার লো সেলসো।
পাল্টা আক্রমণে গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। ৫২ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ান রিচার্লিসন। তবে অফসাইডের জন্য গোল বাতিল হয়।
পরের শট ব্যর্থ করে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্তিনেজ। ৫৫ মিনিটের মাথায় রিচার্লিসনের আক্রমণ আরেকবার প্রতিহত করেন মার্তিনেজ। এর মধ্যে ৬৮ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার ডি পল। দুই মিনিট বাদে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের রেনান লোদি।
৭১ মিনিটে আর্জেন্টিনার জালে শট নেন পাকুয়েতা। কিন্তু পাকুয়েতার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটেই ট্যাগলিয়াফিকোকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন তিনি।
৮২ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পেয়ে যায় ব্রাজিল। কিন্তু, পোস্ট থেকে দূরে থাকায় শট কাজে লাগাতে পারেননি নেইমার। পরের মিনিটে কর্নার থেকে নেইমারের নেওয়া শটে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি ব্রাজিল তারকারা। ৮৭ মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে অনেক বড় সুযোগ হারায় ব্রাজিল।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শেষের দিকে জমে ওঠে ম্যাচ। হলুদ কার্ডের ছড়াছড়িতে উত্তাপও ছড়ায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ব্রাজিল। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় গেলবারের চ্যাম্পিয়নদের।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। যে মাঠে দুদলের লড়াই হয়েছে, গেল আসরে এই মাঠেই কোপার মুকুট পরেছিল ব্রাজিল। সেখানে তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে আর্জেন্টিনার। এই মারাকানাতেই ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে শিরোপা জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। একই মাঠে মেসিরা কেঁদেছিল গেল আসরেও। সেবার স্বাগতিক ব্রাজিলের কাছে হেরে শেষ চার থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা। এবার অবশ্য সেটা হয়নি। দীর্ঘ ২৮ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ট্রফির স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা।