‘ইউরোর ফাইনালে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আরও বাড়বে’

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের উন্মাদনায় কাঁপছে পুরো ইউরোপ। করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই গত এক মাস ধরে চলছে ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর ইউরো ও কোপা আমেরিকা।

করোনা নামক ঝড় যখন থেকে পৃথিবীতে এসেছে, তখন থেকেই জীবন থেকে হারিয়ে গেছে আনন্দ, উৎসব। চীনের উহান থেকে শুরু এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ঝরেছে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ। করোনার সংক্রমণ রোধে গত বছর পিছিয়ে দেওয়া হয় ইউরো, কোপা আমেরিকা ও অলিম্পিকের মতো বড় আসর।

কিন্তু থামানো যায়নি সংক্রমণ। জীবন তো থেমে থাকে না। তাইতো ঝুঁকি নিয়েই এ বছর চলছে ফুটবলের দুই মহোৎসব। কোপা আমেরিকার ফাইনালের আগে উন্মাদনা ছড়াচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল। আর ইউরোপ কাঁপাচ্ছে ইতালি-ইংল্যান্ড।

৫৫ বছর পর ফুটবলের বড় কোনো আসরের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। শুধু কি তাই? নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম ইউরোর ফাইনালের মঞ্চে পা রেখেছে ইংল্যান্ড। পুরো দেশজুড়েই চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। দলে দলে ওয়েম্বলি উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য তর সইছে না ফুটবল সমর্থকদের।

ইংল্যান্ডের মতো ইতালিও দীর্ঘ অপেক্ষার পর ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ২০১২ সালে স্পেনের কাছে ফাইনালে হারের পর, ২০১৬ সালটাও ভালো যায়নি। আর রাশিয়া বিশ্বকাপে তো বাছাইপর্বেই পাশ করতে পারেনি আজ্জুরিরা। মানচিনির জাদুর কাঠিতে এবার উজ্জীবিত ইতালি। ইউরোপের দুই পাওয়ার হাউসের ফুটবল মহারণে মেতে ওঠার আশায় পুরো দুনিয়া।

চলছে প্রস্তুতি। কিন্তু এসব আনন্দের মাঝে নিজেদের সুরক্ষার কথা বেমালুম ভুলে বসেছেন সবাই। ইউরোর দুই সেমিফাইনালের ভেন্যু ওয়েম্বলিতে ম্যাচ চলাকালীন উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। ম্যাচ শেষে জয়ী দলের সমর্থকরা নেচেগেয়ে উৎসব করেছেন। আনন্দে জড়িয়ে ধরেছেন একে অপরকে। দেখে মনেই হয়নি কি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। করোনা সংক্রমণ থাকলেও এরইমধ্যে ব্রিটেনে খুলে দেওয়া হয়েছে ৭৫ শতাংশ দোকানপাট। অর্থনীতিকে চাঙা করতে ১৯ জুলাইয়ের মধ্যেই আগের মতো সব খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

ইউরো সামনে রেখে অবাধে খুলে দেওয়া হয়েছে বার, হোটেল ও রেস্তোরাঁ। ফাইনালে স্টেডিয়াম ছাড়াও বড় পর্দায় বিভিন্ন জায়গায় খেলা দেখবেন সমর্থকরা। ইউরো সবার প্রাণে আনন্দের সঞ্চার করলেও ভিন্ন কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। ইউরোর কারণে সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। ফাইনালে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।

লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক স্টিভেন রিলে বলেন, ‘খেলাধুলা আমাদের আনন্দ যোগায় সত্যি। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পরিস্থিতি কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। সেমিফাইনালে আমরা দেখেছি সমর্থকদের মাঝেই গা ছাড়া একটা ভাব। গেল কয়েক দিন আমরা খেয়াল করেছি ইউরো দেখতে আসা সমর্থকদের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। সবাইকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি আমরা।’
ফাইনালে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং যারা পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ পেয়েছেন এমন ৬০ হাজার দর্শকের জন্য স্টেডিয়ামের দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু মাঠের বাইরে যারা আছেন তাদের কতটা সুরক্ষিত রাখা যাবে। এ প্রশ্ন বিশ্লেষকদের। ফাইনালের পর সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

সুফলক ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক কেইথ স্টিল বলেন, ‘ম্যাচে জয়ের পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে, এতে করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। অনেক দর্শক ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। তাদের মোটেও নিয়মের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। সবাই যদি ঠিকভাবে নিয়ম মেনে মাস্ক পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানে তবে, সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে।’

এমন পরিস্থিতিতে ফাইনালের আগে আয়োজকদের আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেছেন বিশ্লেষকরা।

এন-কে

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img