হীরাসহ দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

মাত্র ২০ সেকেন্ডে ছিনতাই করেন আকাশ। তার প্রধান টার্গেট সিএনজি। চলন্ত সিএনজিতেই পেছনে উঠে সেকেন্ডের মধ্যে সিএনজির পর্দা কেটে ভেতরে থাকা যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যান। পুরো ঘটনা ঘটাতে তার সময় লাগে সর্ব সাকুল্যে ২০ সেকেন্ড! আবার গাড়িতে জানালার পাশে বসা যাত্রীদের মোবাইল ছিনিয়ে নিতেও সিদ্ধহস্ত এই ছিনতাইকারী। চোখের পলকে মোবাইল নিয়ে হাওয়া হয়ে যান তিনি! তবে এবার মোবাইল বা টাকা নয়, দুর্ধর্ষ এই ছিনতাইকারীকে দামি হীরাসহ গ্রেফতার করেছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

২৪ জুন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে আকাশের স্ত্রীসহ এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৮ পিস ডায়মন্ড, বিভিন্ন সময় ছিনতাই করা ১৬টি ভ্যানিটি ব্যাগ, ছিনতাইকৃত ভিভো, অপ্পো, রেদমি, এমআইসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১টি মোবাইল সেট, নগদ ২০ হাজার টাকা এবং সিএনজি’র হুড কেটে নেওয়ার একটি কাটার উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন – ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান মোঃ আকাশ (২৪)। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ৩ টি মামলা রয়েছে।

তার অন্য সহযোগীরা হলেন- তার স্ত্রী তানিয়া বেগম (২৫), আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (৪৫) এবং মোঃ তাজুল ইসলাম (৪০)। এই আনোয়ার নিজেকে পুলিশের সোর্স বলে পরিচয় দেন।

গত রমজানে এক তরুণী গন্তব্যে যাওয়ার সময় সিএনজির পর্দা কেটে তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায় আকাশ। তখন থেকেই তাকে ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। অবশেষে গতকাল রাতে আকাশকে তার বাকি সদস্যসহ গ্রেফতার করা হয়।

তাকে গ্রেফতারের পর তার ছিনতাইয়ের আরও ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে। মাত্র ৩ বছরেই ২ শতাধিক ছিনতাই করেছে এই দল! আকাশ ছিনতাই করেন ১০ বছর ধরে। আগে তিনি নারী ছিনতাইকারী ফারজানার গ্রুপে কাজ করতেন। পরে ফারজানার গ্রুপ থেকে বের হয়ে এখন নিজেই করেন এ কাজ। ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা পর্যন্ত তার মূল অপরাধ সীমানা।

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, একদিনে একটি ছিনতাইই করে আকাশ। ভালো আয় হলে কয়েকদিন চুপ থাকত। কিন্তু খারাপ হলে একইদিনে একাধিক ছিনতাইও করত। সে একসময় বন্দরে শ্রমিকের চাকরি করত। তখন বন্দরে চলাচলরত গাড়িগুলো থেকে কৌশলে ড্রাইভারের মোবাইল ছিনিয়ে নিতো।

হীরাসহ দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতারতার এই কাজের একজন অংশীদার তার স্ত্রীও’ বলেন ওসি মহসীন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত তানিয়া আকাশের স্ত্রী। তিনি আকাশ সম্পর্কে সবই জানেন। সব জেনেই বিয়ে করেন কম বয়সী আকাশকে। শুধু জেনেই বসে থাকেননি, স্বামীর অপকর্মে সহযোগিতাও করেছেন সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে! আকাশ ছিনতাইয়ের পর সব মালামাল জমা রাখতেন স্ত্রীর কাছেই! আবার স্বামী ধরা পড়লে আদালত পাড়ায় ছুটতেন স্ত্রী তানিয়া! আকাশ এর আগেও ৩ বার গ্রেফতার হয়। প্রতিবারই জামিন করান স্ত্রী তানিয়া! সর্বশেষ এপ্রিলেও গ্রেফতার হয় আকাশ। জেলও খাটে। তাকে আবারও জামিন করান তানিয়া। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে নেমে এবার ধরা পড়ে যায়।

উদ্ধারকৃত ৮ টি ডায়মন্ডের মাত্র দুইটি পাওয়া গেছে আকাশের স্ত্রী তানিয়ার কাছে। বাকি ৬টি ডায়মন্ডের ৩টি উদ্ধার করা হয়েছে আনোয়ারের কাছ থেকে এবং বাকি তিনটি তাজুলের কাছ থেকে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এন-কে

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img