সুকুমার রায়ের হ য ব র ল-র ওই বুড়োর কথা মনে আছে? বুড়ো কত সহজে কত বার যে বয়স বাড়িয়েছিলেন আর কমিয়েছিলেন কে জানে। কখনো নিজের বয়েসটাকে চল্লিশ পেরুতে দেননি তিনি।
তবে এতদিন যা কল্পবিজ্ঞানের গল্পে পড়েছেন, সেটা যদি বাস্তব হয়? ধরুন যতদিন ইচ্ছে বাঁচতে পারলেন, এমন সুযোগ যদি হাতের সামনে চলে আসে? এতদিন যা ছিল উদ্ভট কল্পনা, তাই বাস্তব হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের মতে, অদূর ভবিষ্যতেই মানব প্রজাতি এক ধরনের হাইব্রিড প্রজাতিতে পরিণত হবে। হার্ভার্ডের জিনতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ ডেভিড সিনক্লেয়ার দাবি করছেন জিনের পুনর্স্থাপনের মাধ্যমে মানুষ পেতে পারে অমরত্ব।
২০২৩ সালেই শুরু হতে চলেছে জিন পুনর্স্থাপনের ট্রায়াল, এটি মানুষের স্বাভাবিক আয়ুর গড়ের চেয়ে অনেক বেশি দিন বাঁচতে সহায়তা করবে।
ইঁদুরের উপর প্রাথমিক পরীক্ষাও সেরে ফেলেছেন তারা। জানাচ্ছেন মস্তিষ্কে ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বয়সের বৃদ্ধি কমিয়ে দেওয়া নাকি সম্ভব!
সিনক্লেয়ার আরও বলছেন, এক ধরনের এমব্রায়োনিক জিন রয়েছে, যেটা তারা পরিণত বয়সের প্রাণীর উপর প্রয়োগ করছেন শরীরের টিস্যুর বয়স নতুন করে স্থাপন করার জন্য। এটা ঠিক মতো কাজ করতে ৪-৮ সপ্তাহ লাগছে। ধরা যাক একটি অন্ধ ইঁদুর বয়সের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, তার নিউরোনের সংযোগ মস্তিষ্ক অবধি ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না। সেই নিউরোন পুনর্স্থাপন করলে ইঁদুরটি আবার তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে। এখন যেটা জানা ছিল না সেটা হল, টিউমার তৈরি করা বা চোখে স্টেম সেল বসানো ছাড়া কি আংশিকভাবে ইঁদুরটির বয়স ফিরে পাওয়া কি সম্ভব? উত্তর, সম্ভব।
সিনক্লেয়ার বলছেন, এই ধরনের পরীক্ষা মানবদেহের জন্যও শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। এই পরীক্ষা কোষের বয়সবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে উল্টোপথে চালিত করবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন মানুষের আয়ুরেখার কোনো নির্ধারিত সীমারেখা নেই। জিনতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের দাবি আজ যে শিশুটি জন্মাচ্ছে, সে অনায়াসে ১০০ বছর বাঁচার প্রত্যাশা অচিরেই রাখতে পারে। মানুষের বায়োলজিক্যাল অর্গানিজম যে থেমে যাবেই, এমন কোনো কথা কিন্তু নেই।
সম্প্রতি অন্য একটি গবেষণা মানুষের অমরত্ব লাভের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিলেও এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে মানুষ ১২০-১৫০ বছর অবধি বাঁচতেই পারে। এই বয়সের পর অবশ্য মানুষের শরীর সম্পূর্ণভাবে যে কোনো শারীরিক অসুস্থতা বা আঘাত থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতা হারায়। কিন্তু আয়ুর শেষ সীমা যদি ১২০-১৫০ বছরও হয়, তা হলে সেটাই বা কম কী!
এন-কে