দেশে বেড়েই চলেছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এরমধ্যে সাতক্ষীরায় করোনা পরিস্থিতি ক্রমে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৭ জন আর রাজশাহী বিভাগে ৮ জন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। আইসিইউ’র চাহিদা বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ জনের করোনা পরীক্ষায় ১০৮ জন পজিটিভ। সংক্রমণের হার ৫৫ থেকে ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও চারজন বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত।
তারা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার নৈকাটি গ্রামের কালাচাঁদের ছেলে সামাদ শেখ (৫৫), সাতক্ষীরা সদরের রাজারবাগ এলাকার নজিব আলী মিস্ত্রি (৭০), আখড়াখোলা গ্রামের মিজানুর রহমান (৫০) ও শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের তলেন বক্স (৮০)।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে সাতক্ষীরায়। গত শনিবার (৫ জুন) থেকে জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউনের ফলে করোনা পরিস্থিতি কমছে কিনা সেটি জানা যাবে আরও ১৪ দিন পর বলেও জানান তিনি।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে করোনার লাগাম টানতে প্রশাসনকে কিছুটা কঠোর হতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে চলছে তল্লাশি। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভোমরা স্থলবন্দরেও সীমিত পরিসরে চলছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে ভারতীয় চালক ও হেলপাররা যাতে খোলামেলা ঘুরে বেড়াতে না পারেন সেজন্য পুলিশ ও বিজিবির নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
খুলনা:
এদিকে লকডাউনের পরও খুলনার তিনটি থানায় কমছে না সংক্রমণের হার। খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাাতালের মুখপাত্র সুভাষ রঞ্জন হালদার জানান, খুলনা সদরে ৫৯ শতাংশ, সোনাডাঙ্গায় ৩৫ শতাংশ এবং খালিশপুরে ৩৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ। ২৪ ঘণ্টায় খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাাতালে করোনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৮১ জন।
বাগেরহাট:
সীমান্তবর্তী জেলা বাগেরহাটে কোভিড হাসপাতালে নেই কোনো ভেন্টিলেটর। ৩টি আইসিইউ থাকলেও চালানোর মতো নেই কোনো জনবল। ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ জনের মধ্যে ৫৯ জন পজিটিভ, মারা গেছেন ৩ জন। শনাক্তের হার ৩৮ শতাংশ। সংক্রমণ বাড়ায় বুধবার ৭দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে প্রশাসন।
মোংলা:
মোংলায় চলমান লকডানের দশদিন পার হলেও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ জনের নমুনায় ৩০জন আক্রান্ত আর মৃত্যু হয়েছে একজনের বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিবেষোশ বিশ্বাস।
রাজশাহী:
দিনদিন বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। সেইসঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ। এতে হিমশিম অবস্থা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের।
হাসপাতালটিতে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৫ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন। একদিনে ৪শ ৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৯ জন। শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ বলে জানান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. শামীম ইয়াজদানী।
নাটোর:
এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে নাটোর জেলার সদর ও সিংড়া পৌরসভায় চলছে ৭ দিনের লকডাউন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন বলে জানান পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
যশোর:
যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৪৩ জন করোনায় শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছে দু’জন। শনাক্তের হার ৪৯ শতাংশ।
এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আর ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশে।