চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষণায় দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র কারণে হালদা নদীর লবণাক্ততা বেড়েছে প্রায় ৭২ গুণ। আবার ওয়াসার হিসাবে লবণাক্ততা বেড়েছে প্রায় ৭৭ গুণ। সব মিলিয়ে হালদা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মা মাছ ডিম ছাড়ার ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ে ‘ইয়াস’র মারাত্মক প্রভাব পড়েছে হালদা নদীতে।
আবার ‘ইয়াস’র এই বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে- হালদার নদী ও নদীর উজানের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত না হওয়া। একই সঙ্গে যোগ হয়েছে বজ্রপাত না হওয়াও। তাই এ বছর স্বাভাবিকের চার ভাগের এক ভাগ ডিমও পায়নি সংগ্রহকারীরা। অথচ নদীর সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আশা করা হয়েছিল স্মরণকালের সর্বোচ্চ ডিম পাওয়া যাবে এবার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়েছে। সেই জোয়ারের পানি ঢুকেছে হালদা নদীতে। এর প্রভাবে হালদার পানিও বেড়েছে কয়েক ফুট। মা মাছ ডিম ছাড়ার সময় সমুদ্রের এই লবণাক্ত পানি নদীতে প্রবেশ করায় হালদার সর্বনাশ হয়েছে। তবে হালদায় যদি এ সময়ে পাহাড়ি ঢল থাকত, তবে লবণাক্ততা কিছুটা কম হত। মা মাছ মোটামুটি ডিম ছাড়তে পারত।
হালদার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া বলেন, ‘গত বছর আমি ছয়টা নৌকা দিয়ে প্রায় ২২০ কেজির মতো ডিম পেয়েছিলাম। এ বছর ডিম বেশি পাওয়ার আশায় আরও একটি নৌকা যোগ করেছিলাম। তবে সাতটি নৌকা মিলিয়ে ডিম পেয়েছি মাত্র ৩৫ কেজির মতো। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র কারণে লবণ পানি ঢুকায় আমাদের সর্বনাশ হয়েছে। যদি মা মাছ আবার ডিম ছাড়ে তবে আমরা কোনোভাবে সারতে পারব।’
জানতে চাইলে হালদার নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘আমি ছয়টা নৌকা দিয়ে গত বছর ৪০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিলাম। তবে এবার ছয়টি নৌকা দিয়ে মাত্র ৮০ কেজি ডিম পেয়েছি।’
হালদা নিয়ে রাত-দিন এক করে কাজ করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, মা মাছের উপস্থিতি এবং লকডাউন ও তদারকি বৃদ্ধির পর নদীর সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আশা করা হয়েছিল এ বছর হালদাতে সর্বোচ্চ ডিম পাওয়া যাবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র কারণে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় মা মাছ অনেকটা জোর করেই অল্প ডিম ছেড়েছে।’
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘এখনও হিসেব করা হয়নি, হালদাতে কী পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে। তবে খুব অল্প সংখ্যক ডিম পাওয়া গেছে। যেটি অপ্রত্যাশিত ছিল।’
মা মাছ আবারও ডিম ছাড়বে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনের মাসে দুটি জো আছে। ওই জো-তে পরিবেশ ভালো থাকলে আবারও ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।