মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি এবং খোলার বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এবার পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অটো পাস দেওয়ার সম্ভাবনা কম। দেওয়া উচিতও হবে না।
তিনি বলেন, এ বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরের (২০২২) এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও হবে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। এ জন্য এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১৫০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ১৮০ দিন ক্লাস করানোর জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব শিক্ষার্থীর জন্য আগামী জুন থেকে সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পরদিন ১৩ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি ভাল থাকলে ১৩ জুন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি নির্ভর করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টিকা দেওয়ার ওপর।
শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি হয়তো টিকার ওপর খানিকটা নির্ভর করছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে চাওয়া হয়েছে। তবে ধরে নেওয়া যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীদের বয়স ৪০-এর নিচে, তাই অধিকাংশই হয়তো টিকা নিতে পারেননি। তবে টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছাড়াও বিকল্প কী করা যায়, সেটা ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ২৯ মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এখন তা বেড়ে হল ১২ জুন। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ১৫ মাস ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। যার ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে। ক্লাস এবং পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেকে ঘাটতি নিয়েই উঠছে ওপরের ক্লাসে।
রাজধানীর মিরপুর মডেল একাডেমি স্কুলের ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী কাজী সায়মা সুলতানা দিনেরখবরকে বলেন, করোনার কারনে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক বিরূপ প্রভাব পরেছে। আমাদের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এই মহামারীর জন্যই। এছাড়া দেশের সমস্ত কার্যক্রম যেখানে সীমিত পরিসরে চলছে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে মনে করেন সায়মা।
দেশের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার এবং বিদ্যালয় থেকে যথাযথ নিয়মে সিলেবাস শেষ করে তাদের ঘাটতি পুষিয়ে বোর্ড পরীক্ষা নেওয়ারও আবেদন জানান এই শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য যে, একটি বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার বা শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষার এ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন দেশের শিক্ষাবিদেরা।